চকরিয়ায় হারবাং ইউপি চেয়াারম্যান মিরানসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা

এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া ◑

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০-৩০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। শাররীক নির্যাতনের শিকার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় চকরিয়া থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। এ সময় বাদীর দুইকন্যা রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলি এবং মেয়ের জামাই রুবেল প্রকাশ রাসেলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা অপর তিন আসামীরা হলেন হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং বৃন্দাবনখিল এলাকার চুরি হওয়া গরুর মালিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাস্টার মাহাবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) একই এলাকার ইমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২) ও জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮)। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি প্রকাশ্যে রশিদিয়ে বেঁধে শাররীক নির্যাতন এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হয়।

থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ পারভীন আক্তার দাবী করেন, গত ২১ আগস্ট সকালে আমি, ছেলে আরমান ও তার বন্ধু ছুট্টু এবং দুইকন্যা রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলিকে সাথে নিয়ে পটিয়ার শান্তিরহাট ভাড়া থেকে একটি যাত্রীবাহি মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট স্টেশনে আসি। পরে সবাই মিলে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে মহাসড়ক দিয়ে আমার মেয়ের শশুড়বাড়ি চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের হাইদ্দারনাশির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। এদিন দুপুরে আমাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং বৃন্দাবনখিল লালব্রীজ এলাকায় পেঁৗছলে দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে ছয়জন লোক আমাদের আক্রমণ করে সিএনজি অটোরিকশাটিকে ধাওয়া করতে থাকে। এ সময় সিএনজি চালক ভয়ে আমাদেরকে নিয়ে হারবাং স্টেশনের পশ্চিমদিকের রাস্তায় গাড়ি চালাতে থাকেন।

এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল আরোহী যুবকগণসহ আরো অন্যান্য লোকজন আমাদেরকে পেছনদিক থেকে ধাওয়া করে হারবাং ইউনিয়নের দক্ষিণ পহরচঁান্দা নির্মানাধীন রেল নাইনের উপর গিয়ে আটক করে। এ সময় আমরা সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হয়। পরে মোটরসাইকেল আরোহী লোকজন ছাড়াও অন্যান্য লোকজন সেখানে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্ঠি করেন। এ সময় তারা আমাদেরকে গরুচুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কিল,ঘুষি ও চড়,ধাপ্পড় মেরে গুরুতর আহত করে। পরে এজাহারনামীয় আসামীগন আমার কাছ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ১৭ হাজার পঁাচশত টাকা মূল্যমানের একজোড়া কানের দুল, ১২শত টাকা দামের একটি মোবাইল সেট, আমার মেয়ে রোজিনা আক্তারের গলায় থাকা আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি স্বর্ণের চেইন, অন্যান্য স্বর্ণালংকার ও সরঞ্জামসহ প্রায় দুইলাখ টাকার মালামাল কেড়ে নেয়। পরে তারা আমাদেরকে কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে অশ্লিল গালাগাল ও মারধার করতে করতে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

বাদিনী মামলার এজাহারে আরো দাবী করেন, আমাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান আমাকে ও আমার দুই মেয়ে এবং অন্যান্যদের কাঠের চেয়ার দিয়ে বেদড়ক মারপিট ও অশ্লিল ভাষায় গালাগালি শুরু করে। এক পর্যায়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে হারবাং ফঁাড়ি পুলিশ ইউপি কার্যালয় থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এজাহার নামীয় ও অন্যান্য আসামীগন আমাদের বিরুদ্ধে গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার পর আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য কোমরে রশিদিয়ে বেঁধে শারিরীক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানীর পাশাপাশি গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থানায় মামলা করে। মিথ্যাচুরির মামলায় আমরা জেল খাটার পর গত ২৪ আগস্ট বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্ত হই। জেল থেকে বের হয়ে এজাহার নামীয় ও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে সময় ক্ষেপন হওয়ায় মামলা করিতে বিলম্ব হয়েছে বলে দাবী করেন মামলার বাদী পারভীন আক্তার।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, হারবাং ইউনিয়নে গরু চুরির অভিযোগে মা মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে শারিরীক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছেন পারভীন আক্তার নামে এক নারী। এ মামলায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ২০-৩০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়।

প্রসঙ্গত: গত ২১ আগস্ট দুপুরে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে হারবাং ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও কতিপয় উৎসোক জনতার বিরুদ্ধে।

শনিবার দিবাগত রাতে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা-মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব পদ মর্যদার) শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে এ তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।