চার লেন হচ্ছে কক্সবাজারের প্রধান সড়ক

মনতোষ বেদজ্ঞ/আজিম নিহাদ :

কক্সবাজার শহরের হলিডের মোড় থেকে বাজারঘাটা হয়ে লারপাড়া বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রধান সড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। পরিকল্পিত নগরায়নের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের সৌন্দর্য বর্ধন ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহন করার কথা জানিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৪ কোটি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

প্রধান সড়কটি প্রয়োজনের তুলনায় কম প্রশস্তের হওয়ায় যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার। যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ‘সময়’ ক্ষতির পাশাপাশি নাগরিক দুর্ভোগও চরম পর্যায়ে পৌছেছে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি লাভে অবশেষে একনেক সভায় প্রশস্তকরণ ও সংস্কার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক এর চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে জুন ২০২১ পর্যন্ত।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আনোয়ার উল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি চার লেন করা হবে। এটা যেহেতু সড়ক বিভাগের রাস্তা, তাই সড়ক বিভাগের গেজেট অনুযায়ী রাস্তার প্রশস্ততা যেখানে যতটুকু আছে ততটুকু জায়গা ব্যবহার করে আমরা কাজ করবো।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সড়ক বিভাগের সাথে সমন্বয় কিভাবে করা হবেÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সড়ক বিভাগের সাথে ইতোমধ্যেই আমাদের সমঝোতা হয়েছে। বিগত দুই আড়াই-বছর ধরে আমরা প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করছি। সড়কের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে পরবর্তী রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সড়ক বিভাগকে হস্তান্তর করা হবে।’    
প্রধান সড়ক দখল করে ইতোপূর্বে যেসব অবৈধ  স্থাপনা গড়ে উঠেছে তা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আনোয়ার উল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না। গেজেটে প্রধান সড়কের জন্য যতটুকু জায়গা আছে, পুরো জায়াগাটা নিয়েই এ রাস্তাটা করা হবে।’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে: কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান প্রধান সড়ক প্রশস্ত করার পাশাপাশি ফুট ওভার ব্রীজ, ড্রেন, ব্রীজ-কালভার্ট, ফুটপাত, সাইকেল ওয়ে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সবুজায়ন, সড়ক বাতি স্থাপন, সিসি ক্যামেরা এবং ওয়াইফাই সংযোগ স্থাপন কর হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২/৩ তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম, হাজারো জটিলতা এবং অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করেছে। এ জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’

কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি শহর। পুরো জেলাজুড়ে সরকারের মেগাপ্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। একারণে শহরের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে। এমতিনেই সাধারণ নাগরিকদের জন্য সড়কটি প্রশস্ত করণ অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেগাপ্রকল্প গুলো বাস্তবায়নের কারণে শহরে বাণিজ্য বাড়বে। মানুষের সমাগম বাড়বে। এরফলে পরিবহনও বেড়ে যাবে। তাই এটি সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শহরের চিত্র পাল্টে যাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

এদিকে একনেক এর সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

এসময় তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী পর্যটন জেলা কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনকে আরো একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে মাস্টারপ্ল্যান হবে তারপর উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে। সেসব প্রকল্পের মানসম্মত বাস্তবায়ন এবং যেখানে-সেখানে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহর রক্ষায় সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ঝাউবন লাগাতে হবে।’