ছেপটখালী গ্রাম এবং হারানো স্মৃতি!

কক্সবাজার জেলা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি৷ তারই ধারাবাহিকতায় উখিয়া উপজেলায় একটি ছোট্ট গ্রাম ছেপটখালী, আমার গ্রাম আমার মাতৃভূমি৷

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এবং মেরিন ড্রাইভের কোল ঘেষে গড়ে উঠা অনিন্দ্য সুন্দর একটি গ্রাম ছেপটখালী, পূর্ব পাশে পাহাড় তার পশ্চিমে সাগর নিয়ে মানুষের কত সুন্দর বসবাস৷ ছোট্ট এই গ্রামের অভিভাবকদের নৈপুণ্যে আজ কত ছাত্র দেশে বিদেশে সুনাম জুড়াচ্ছে, আবার কত অভিভাবকদের অজ্ঞতার ইতিহাসের নিচে চাপা পড়ে আছে কতশত ভবিষ্যৎ কর্ণধার! সব গুণের মানুষ নিয়ে ভরপুর এই অনিন্দ্য গ্রামটি, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামের আত্মকথার মতই এই গ্রামের আত্মকথন কম নয়!

প্রতিটি গ্রামের মতই এখানকার মানুষেরা কতই রসিক_কতই খোশমেজাজের কিংবা কতইনা কঠোরও, জেলে_চাষি_ব্যবসায়ী_চাকুরীজীবি পেশায় মানুষে কত বৈচিত্র্য! কেউ নিয়মিত জেলের পেশায় সাগরের সাথে সংসারের হাল টানে, কেউ আবার হরেক সুস্বাদু মাছের ব্যবসায়! কেউ কুঠার নিয়ে পাহাড়ে বা গরু_লাঙ্গল কিংবা ট্রাক্টর নিয়ে চাষের মাঠে যায় উপার্জনে৷

যখনই মন খারাপ হয় যাই পশ্চিমের সমুদ্রে মিশতে কিংবা পাহাড়ের সৌন্দর্যে বিলীন হয়ে যেতে! আবার একগাদা বন্ধুদের সাথে মেরিন ড্রাইভে হাটার মত সুন্দর অনুভূতির খোঁজেও যাই বারবার, ক্রীড়াপ্রেমি সকলে মিলে বিচিত্র খেলাধুলায় মেতে উঠে অনিন্দ্য বিনোদন! যাক, গ্রামের সৌন্দর্য নিয়ে বলা শেষ কবে আর হবে!

শিক্ষার পরিবেশ তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে গ্রামাঞ্চলে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া আসলে একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার, এখানকার স্কুল প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্ররা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়৷ হয়ত সেটি গ্রামের এই সংস্কৃতিতে অনেকটা কঠিনও, দূরদর্শিতার অভাবে অসংখ্য তরুণের ভবিষ্যত অন্ধকারেই রয়ে যায়৷ পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়ির কাজও সামলাতে হয় অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর, তবে খেলাধুলা কমবেশি সবাই করে৷

সাগরের পানি আর ভারি বর্ষণে গ্রামের সৌন্দর্যে বলতে গেলে একপ্রকার ভাটা পড়েছে, মেরিন ড্রাইভ পার হয়ে সাগরে যাওয়ার মাঝখানে হয়ে গেছে খাল৷ সাগরের পানিতে ভেঙে গেলো ঝাউবাগানের সুন্দর গাছগুলো, নৌকাগুলোও তাদের নির্দিষ্ট ঘাট হারিয়েছে৷ সবচেয়ে বড় অন্তরায় সৃষ্টি হলো খেলাধুলায়, বিনোদনে প্রভাবটা আসলেই প্রকট৷

মেরিন ড্রাইভের পাশ্ববর্তী একটি বিশাল খেলার মাঠ, যেটি পুরো ছেপটখালীকে রিপ্রেজেন্ট করতো! সেটি এখন নাই হয়ে গেলো, সাগরেও খেলার মত প্রশস্ত জায়গা হারালাম৷ বিকাল বেলায় বল নিয়ে ক্রীড়া প্রেমীদের এদিক সেদিক ছুটতে দেখা যায়, জোয়ার আসলে সাগরেও খেলাটা আর হয়না৷

তবে হ্যা, গ্রামের অভিভাবকদের প্রতি আমাদের একটি আফসোস রয়েই যাবে৷ আমরা মাঠ কে রক্ষার্থে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি, চেষ্টা করলে হয়ত একদমই বৃথা যেতোনা৷ অসংখ্যবার কথা দিতে শুনেছি, প্রয়োগ করতে দেখিনি৷ তবে সবাই মিলে আজকে মাঠকে সাগরের পানিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখেছি, বুকভরা কষ্ট নিয়ে সকলে দেখেই গেলাম৷ এই পরিপাটি গোছানো মাঠ হারানো এখন আমাদের কাছে শুধুই স্মৃতি, হারানো স্মৃতি৷

বর্তমানে আমাদের ছেপটখালীতে একটি উপযোগী খেলার মাঠ অত্যন্ত প্রয়োজন, খেলাধুলায় অন্তরায় সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে অসংখ্য তরুণরা বিভিন্ন খারাপ পথে ঝুকে পড়েছে৷ তাছাড়া মহামারীর এই ভয়াবহতায় দীর্ঘ সময় ধরে গৃহবন্দি থাকায় যুব সমাজকে ভুল পথে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করেছে৷

আমরা চাই, অভিভাবকত্ব ফিরে আসুক প্রতিটি ঘরে প্রতিটি মনে৷ গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্রমবর্ধমান হোক ক্রমহ্রাসমান নয়! সম্মিলিত চেষ্টা একদমই বৃথা যায়না, আশানুরূপ সফলতা না পেলেও এইতো চেষ্টাতো কম করিনি! শিক্ষার পরিবেশে বেড়ে উঠুক প্রতিটি গ্রাম, দূরদর্শিতায় স্বপ্ন দেখুক উন্নত জীবনের সন্ধানে৷

প্রতিটি গ্রাম শহরের বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য আছেই, আমি না হয় আমার গ্রাম নিয়েই কিছু বললাম৷

মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ
ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়