টানা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে ছুটল ট্রলার: উৎফুল্ল জেলেরা

নুনিয়ারছড়া ফিশারিঘাটে সাগরে মাছের সন্ধানে যেতে প্রস্তুত ট্রলারগুলো।

সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জার্নাল ডটকম •

টানা ২২ দিন পর (৩০ অক্টোবর) বুধবার মধ্যরাত (১২টার পর) থেকে উঠে গেছে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। আজ ৩১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ভোর থেকে সাগরে মাছের সন্ধানে যাচ্ছে ট্রলারগুলো। গতকালই সাগর ও নদীতে নামতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন জেলেরা। ফলে আবারও বাজারে দেখা মিলবে মাছের রাজা ইলিশের। ট্রলার নিয়ে জেলেরা ছুটছেন গভীর সাগরের দিকে। কেনুইবা ছুটবেন না! টানা ৬৫ দিন পর আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এরপর আজ কক্সবাজারের লাখো জেলের জন্য উন্মুক্ত হলো বঙ্গোপসাগর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের ফিশারীঘাট, নাজিরার টেক, উখিয়া ইনানী, টেকনাফ শামলাপুর, সদরের চৌফলদন্ডী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, ও জেলার উপকূলীয় এলাকা, ভোর থেকে সাগর মাছের সন্ধানে যাচ্ছে জেলেরা। প্রথমেই ৬৫ দিন এরপর আবার ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে জেলে পরিবারের মাঝে।
জেলেরা জানান, ২২ দিনে তারা মাছ শিকারে নামতে পারেননি সাগরে। সংসারে অভাব-অনটন প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলেরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার, কেউবা এনজিও, সমিতি, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। ট্রলার, নৌকা, জাল মেরামত কাজ সম্পন্ন করে রাত থেকেই সাগরে নামতে তারা সব আয়োজন সমাপ্ত করেছেন।
জেলায় মাছ ধরার ট্রলার আছে পাঁচ হাজারের বেশি। ট্রলারের জেলে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ অধিক। ইতিমধ্যে রূপালি ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের সন্ধানে সাগরে নেমেছে অন্তত দুই হাজার ট্রলার। দু’এক দিনের মধ্যে নামবে আরও তিন হাজার ট্রলার। সাথে ছোট্ট ডিঙি নৌকাগুলোও নামতে শুরু করেছে।

ছোট্ট ডিঙি নৌকার জেলে আবুল কালাম (৪০) বললেন, ছোট আকৃতির এই ডিঙি দিয়ে সাগরের সর্বোচ্চ পাঁচ কিলোমিটার গভীরে যাওয়া যায়। সেখানে জাল ফেলে ছোট আকৃতির পোপা, ছুরি, ছিটকিরি, লইট্যা, ফাইসা, বাটা, চিংড়ি ইত্যাদি ধরা হয়। ইলিশ, লাক্ষ্যা, রূপচাঁদা, কোরালসহ বড় আকৃতির মাছ পাওয়া যায় ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গভীর সাগরে। সেখানে যেতে বড় ট্রলার লাগে।
ফিশারিঘাটের পাশেই বাঁকখালী নদী। বাঁকখালী নদী থেকে ট্রলার ছেড়ে প্রথমে মহেশখালী চ্যানেল, এরপর সোনাদিয়া দ্বীপ হয়ে ট্রলার ছুটছে শত কিলোমিটার দূরে সেন্টমার্টিন সাগরের দিকে।

ফিশারিঘাট এলাকার নুনিয়াছটার জেলে আব্দু সালামের সঙ্গে। বয়স তাঁর ৪০। ২০ বছর ধরে তিনি গভীর সাগরে মাছ ধরছেন। বঙ্গোপসাগরের পানির রং দেখলেই তিনি বুঝতে পারেন, মাছ আছে কি নেই।

আব্দু সালাম বললেন, টানা ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পর আবার ২২ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এ কারণে বঙ্গোপসাগর এখন ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছে ভরপুর হবে। জাল ফেললেই ধরা পড়বে ইলিশ, লাক্ষ্যা, কোরাল, পোপা, গুইজ্যাসহ নানা প্রজাতির মাছ। কিন্তু ইলিশ বিচরণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে, দলবেঁধে। ইলিশ সমুদ্রের যেখানে বিচরণ করে, সেখানটার পানি লালচে আকার ধারণ করে। এটা যারা ধরতে পারে, তাদের জালেই আটকা পড়বে হাজার হাজার ইলিশ।