দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্ব চান কক্সবাজারের সন্তান মুমিনুল

নেতৃত্বের তিন টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে মুমিনুল হকের দল। সঙ্গে ব্যাটিংয়েও বিবর্ণ তিনি। তারপরও ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের অধিনায়ক তিনি। মুমিনুল হক ক্রিকবাজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্বের নিশ্চয়তা পেলে তার জন্য কাজ করতে সুবিধা হয়।

প্রশ্ন: কিভাবে টেস্ট নেতৃত্ব শুরু করেছেন?

মুমিনুল: প্রথম সিরিজে বেশ চাপে ছিলাম। তবে এখন আস্তে আস্তে উপভোগ করছি। প্রথমে কিছু বুঝেই উঠতে পারিনি। কিন্তু পরিকল্পনা কিভাবে কাজে লাগে আস্তে আস্তে বুঝতে পারছি। সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি, কখন কী ভুল করছি তা বোঝার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন: আপনি তো এখনও টেস্টের স্থায়ী কোচ না। দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব পেলে কাজ করতে সুবিধা হবে বলে মনে করছেন?

মুমিনুল: আমি দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়ক, না-কি সিরিজ ধরে ধরে দায়িত্ব পালন করছি তা আমাকে এখনও পরিষ্কার করা হয়নি। তবে দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব পেলে কাজ করতে সুবিধা হয়। শুধু নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নয় যেকোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এটা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: আপনার দায়িত্বের ব্যাপারটি পরিষ্কার করা হয়নি বলে আপনি কি বিরক্ত?

মুমিনুল: না, এটা আমার কাছে বিরক্তির মনে হয়নি। আমি আসলে সিরিজ ধরে অধিনায়ক নাকি দীর্ঘমেয়াদি তা নিয়ে ভাবছি না। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটে নেতৃত্বের এই দোলাচল আছেই। এর মধ্যেই  শিখতে হবে।

প্রশ্ন: দল ভালো খেলছে না বলে আপনার নেতৃত্ব গুনও প্রকাশ পাচ্ছে না মনে করেন?

মুমিনুল: সম্ভবত। যদি দল ভালো না খেলে, ম্যাচ না জেতে, প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া যায় তবে অধিনায়কের নেতৃত্বগুন বোঝা কঠিন।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর রসায়ন খুবই ভালো হওয়া সত্বেও কেন দল ভালো করছে না?

মুমিনুল: কোচের সঙ্গে আমরা বোঝাপড়া ভালো। আমাদের চিন্তা-ভাবনাও প্রায় একই। কিন্তু দল ভালো না করার আমাদের রসায়নের মূল্যায়ন হচ্ছে না।

প্রশ্ন: আপনার ব্যাটিং নিয়ে কথা বলা যাক। শেষ ছয় ইনিংসে আপনি ১১৫ রান করেছেন। নেতৃত্ব কি চাপ হয়ে যাচ্ছে?

মুমিনুল: না, নেতৃত্বের চাপের কারণে এমন হচ্ছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া আমি নেতৃত্ব নিয়ে মাত্র দুটি সিরিজ খেলেছি, এখনই চাপ হয়ে যাচ্ছে এটা বলা ঠিক হবে না। আশা করছি এটা সামনে ঠিক হয়ে যাবে। নেতৃত্বের বিষয়গুলো ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারলে পারফরম্যান্সও আরও ভালো হবে আশা করছি।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে নেতৃত্ব আপনার ওপর চাপ হয়ে যাচ্ছে?

মুমিনুল: আপনার সঙ্গে আমি একমত না। কারণ আমি সহজ ফর্মুলায় ব্যাটিং করি। ব্যাট করার সময় শুধু বোলারের বলের দিকে মনোযোগ দেয়। অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দেয় না।

প্রশ্ন: তাহলে ইনিংস বড় না হওয়ার কারণটা কী?

মুমিনুল: আমার মনে হচ্ছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই আমি সেট হয়ে আউট হয়ে যাচ্ছি। পাকিস্তানে কিংবা ভারতে এটাই হয়েছে। একটা কারণ হতে পারে, দল হিসেবে আমরা এখনও সেট হতে পারিনি। হতে পারে দলের সবাই এই সমস্যায় ভুগছেন।

প্রশ্ন: টেস্টে বাংলাদেশের ঘাটতি কোথায়?

মুমিনুল: আমার মনে হয় দল হিসেবে আমরা পারফরম্যান্স করতে পারছি না। এটা অ্যাথলেটিকস কিংবা দাবার মতো একক কোন খেলা নয়। এখানে তাই দল হিসেবে খেলতে হয়। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিংয়ে আমরা দল হিসেবে খেলতে পারছি না বলেই ফল পাচ্ছি না।

প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে জুটি গড়তে না পারা দলের ক্ষতি করছে মনে করেন?

মুমিনুল: এটা সত্য, বড় দল যারা ভালো খেলছে তারা দল হিসেবে খেলে। বড় জুটি গড়ে। আমারা এটা নিয়মিত করতে পারছি না। সেজন্য সবাই কিছু কিছু রান করে আউট হয়ে যাচ্ছে। বড় জুটি গড়তে পারলে ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া বদলে যায়। শুধু ব্যাটে নয় বোলিংয়ে-ফিল্ডিংয়েও জুটি দরকার।

প্রশ্ন: ভালো পেসারদের বিপক্ষে খেলা কঠিন হচ্ছে বলে মনে হয়?

মুমিনুল: বিদেশে খেলতে গেলে তারা পেস সহায়ক উইকেট বানায়। শুধু আমাদের বিপক্ষে নয়। যেকোন দলের জন্যই ভারতের বিপক্ষে খেলা কঠিন।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনারা পাকিস্তানের বিপক্ষেও খারাপ করেছেন?

মুমিনুল: হ্যা, আমরা সেখানেও কিছু ভুল করেছি। পাকিস্তানের উইকেট ভালো ছিল। চারদিনে আমাদের ম্যাচটা হারা ঠিক হয়নি। অন্তত আমাদের ড্র করা উচিত ছিল। হয়তো আমরা পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারিনি। কোন পরিস্থিতি কিভাবে সামলাতে হবে হয়তো আমরা বুঝে উঠতে পারিনি।

প্রশ্ন: পাকিস্তানে মুশফিককে মিস করেছেন?

মুমিনুল: অধিনায়ক এবং দল হিসেবে তাকে না পাওয়া ছিল বড় ঘাটতি। তিনি অনেকদিন ধরে খেলছেন। একজন দীর্ঘদিন ধরে খেললেই দল তার পূর্ণ সার্ভিসটা পায়। নতুন অধিনায়ক হিসেবে সিনিয়রদের না পাওয়া তাই বড় অপ্রাপ্তি। সিনিয়ররা শুধু খেলেন না অন্যদের থেকে সেরাটা বের করে আনেন। প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা বুঝে নিতে পারেন।

প্রশ্ন: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলের চ্যালেঞ্জটা কী হবে?

মুমিনুল: এটা একটা সুযোগ। জিম্বাবুয়ের পরে আবার পাকিস্তান সফর আছে। দল হিসেবে খেলার এটা ভালো সুযোগ। ব্যক্তিগত অর্জনের দিকে চোখ দিলে হবে না। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের পেস বোলিং কিন্তু ভালো হয়েছে। এটা উন্নতির আভাস দেয়। আমাদের পেসার এবং ব্যাটসম্যানদের এই সিরিজে ভালো খেলতে হবে। দেশের বাইরে তাহলে ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে। সামনে আমাদের দেশের বাইরে অনেক ম্যাচ আছে।