নতুন তাঁবুতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গারা

নতুন তাবুঁ তৈরি রোহিঙ্গাদের জন্য

ইমরান আল মাহমুদ,উখিয়া:
উখিয়ার পালংখালী শফিউল্লাহকাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে ভষ্মিভূত ধ্বংসস্তূপের পোড়া চিহ্ন ভেসে উঠেছে। বার বার ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন সহ স্থানীয়রা। তবে এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার(১০ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ৬শ রোহিঙ্গা ও ৮টি স্থানীয় পরিবার সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করতে দেখা যায় বেসরকারি সংস্থাগুলোকে। সকাল থেকে নতুন তাবু দিয়ে পুনর্বাসন করে দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের। তবে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে দেখা যায়।

রোহিঙ্গাদের মাঝে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার,পানি,বিস্কুট সরবরাহ করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়দের মাঝে শুকনা খাবার ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়রা হলো,গিয়াস উদ্দিন,বেলাল উদ্দিন,মমতাজ বেগম,ছেনুয়ারা বেগম,মনজুর আলম,ফরিদ আলম,ফয়েজ আহমদ ও ফকির আহাম্মদ। তারা সবাই শফিউল্লাহকাটা ১৬ নং ক্যাম্পের স্থানীয় বাসিন্দা।

ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় শাহিনা আক্তার ও সাবেকুন নাহার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,”গতকাল বিকেলে হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়। মুহুর্তে চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়লে প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে ছুটে যায়। তৎমধ্যে নগদ টাকা,স্বর্ণালংকার,আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র,পাসপোর্ট সহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গতকাল থেকে চেয়ারম্যান এর দেওয়া কম্বল, বিস্কুট ছাড়া ও এনজিও সংস্থার দেওয়া রান্না করা খাবার ছাড়া কোনো সহায়তা পায়নি।”

বি-২ ব্লকের রোহিঙ্গা ইব্রাহীম ও আবুল ফয়েজ বলেন,”গতকাল হঠাৎ আগুন ধরে। বাড়িতে আসার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাণে বাঁচতে তাৎক্ষণিক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেরিয়ে নিকটস্থ বাড়িতে চলে যায়। পরে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।”

অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসলাম বলেন,” অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিকটস্থ প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী কে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার স্ত্রী সন্তানদেরও সকাল থেকে ক্যাম্পে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কিছু জানিনা।”

স্থানীয় ১৪টি পরিবারের মধ্যে ৮টি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং ৬টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানান পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন,”ক্যাম্পের ভেতরে বসবাসরত স্থানীয়দের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে শুকনা খাবার ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

উখিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে খাবার পানি সংকট উত্তরণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখা যায়।

৮আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মিডিয়া) মো. কামরান হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০০ ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ইতিমধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ভষ্মিভূত ক্যাম্পের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ৮এপিবিএন’র কর্মকর্তাবৃন্দ। উর্ধ্বতন কর্মকতাদের সমন্বয়ে এক সভায় ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের জরুরী সহায়তা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়। এসময় এনজিও আইএনজিও,৮ এপিবিএন’র উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

এদিকে,সোমবার সকালে ভষ্মিভূত ১৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দ্দৌজা সহ এনজিএ আইএনজিও সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।