নতুন বসতি করতে ভাসানচরের পথে আরো ১৮ শতাধিক রোহিঙ্গার যাত্রা

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, কক্সবাজার জার্নাল •

অপরুপ দৃর্শ্যেঘেরা সৌন্দোর্য্যের লীলাভুমি নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে সেচ্ছায় বসতি স্থাপন করার জন্য উখিয়া-টেকনাফ থেকে তৃতীয় দফায় আরো ১৮ শতাধিক রোহিঙ্গা নর-নারী ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।

২৮ জানুয়ারী (বৃহস্পতিবার) সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়া-টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই গাড়ী গুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সেখান থেকে আজ ২৯ জানুয়ারী (শুক্রবার) নৌবাহিনীর জাহাজে করে তাদেরকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। ভাসানচরে এটি রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দল।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৬৪৫ জন রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচরে গিয়েছিল।

এদিকে সেচ্ছায় ভাসনচরে যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো উখিয়া কলেজ মাঠে এসে জড়ো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই তারা সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ৩৪টি বাস এবং বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

এসময় ভাসানচরগামী রোহিঙ্গারা বাস থেকে হাঁসিমুখে হাতনেড়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানান।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইউনুছ জানিয়েছেন প্রথম দফায় যারা ভাসানচর গেছেন তারা সবাই সেখানকার পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সেখানে তারা এখন আরাম আয়েশে জীবন যাপন করছেন। এ খবর এখন ক্যাম্পের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।

তাদের ভালো থাকার খবর শুনে ক্যাম্পের অন্য রোহিঙ্গারাও দফায় দফায় ভাসানচর যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম দফায় ভাসানচর যাওয়া রোহিঙ্গারা শুরুতে কিছুটা ভয় এবং উৎকণ্ঠায় ছিলেন। কিন্তু এখন ভাসানচরে যে সমস্ত রোহিঙ্গারা স্ব-ইচ্ছায় যাচ্ছে তাদের মাঝে একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছে। উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে দায়ীত্বরত বেশ কয়েকজন মাঝি আনন্দ ভরা কন্ঠে সংবাদ কর্মিদের বলেন, সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে এসব রোহিঙ্গা ভাসান চরে নতুন করে বসতি করার জন্য স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে তারা। অনেক রোহিঙ্গা নির্ধারিত সময়ে ট্রানজিট পয়েন্টে গিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার বাস উঠেছে। তারা আরো বলেন ভাসানচরে আগে যাওয়া রোহিঙ্গারা তাদের জানিয়েছেন এখানে গাদাগাদি করে থাকার চেয়ে ভাসানচরে বসতি স্থাপন করে পরিবার নিয়ে আরামে দিন কাঠাতে পারবে।

উখিয়া টেকনাফের ঝুপড়ি বস্তি গুলোতে থাকার চেয়ে ভাসানচর অনেক বেশি নিরাপদ। সেখানকার ঘরবাড়ি,খাওয়া দাওয়া সবকিছু এখানকার চেয়ে অনেক উন্নত। তাই তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে ভাসানচর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

উল্লেখ্য-২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়ন থেকে প্রানে বাঁচার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পালিয়ে আসা এই সমস্ত রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেয়া হয় উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড় গুলোতে। বর্তমানে নতুন ও পুরাতন মিলে সর্বমোট ৩৪ টি ক্যাম্পে বসবাস করছে প্রায় প্রায় ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা।

এদিকে উখিয়া-টেকনাফে গড়ে উঠা শরনার্থী শিবির গুলো থেকে রোহিঙ্গাদের চাপ কমানোর জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার।

এরপর আশ্রয়ণ-৩ নামে একটি প্রকল্প সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে। কিন্তু ২০১৮ সালে যখন প্রথম তাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়, ঐ সময় রোহিঙ্গাদের কিছু আপত্তি থাকার কারণে তখন তাদের ভাসানচরে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

এরপর সরকারে তরফ থেকে নেয়া বিভিন্ন কার্যকর প্রদক্ষেপ হাতে নেওয়ার পর ভাসানচর সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গারা সেচ্ছায় ভাসানচর যেতে আগ্রহী হচ্ছে।####