নবগঠিত ঈদগাঁও’র গ্রামীণ জনপদে অবকাঠামো উন্নয়নের ছোঁয়া

আবু সায়েম,কক্সবাজার :

কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদঁগাও উপজেলায় অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি ‘ইজিপিপি প্লাস’ এর মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো।

দেশের একমাত্র কক্সবাজার জেলায় শুধু এ প্রকল্পের কাজ চলছে। চলতি বছরের শুরুতে এই উপজেলার কার্যক্রম শুরুর আগে গ্রামীণ সড়কগুলো যেখানে চলাচলের অনুপযোগী ছিল, সেগুলোর চিত্র পাল্টে যাচ্ছে দিনদিন।

সড়ক প্রসস্তকরণ, কালভাট, সেতু ও বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় বন্যাসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাসিন্দারা। এসব উন্নয়ন কাজের ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরীসহ কর্ম সংস্থানের সুযোগ পেয়ে খুশি হতদরিদ্ররা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মক্ষম দুঃস্থ পরিবারগুলোর দারিদ্র্য নিরসন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি ইজিপিপি প্লাস এর আওতায় কর্মহীন মৌসুমে কর্মক্ষম বেকার শ্রমিকদের জন্য দেশে শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলায় ১৬৫ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসুচির কাজ চলছে।

গত ১৯ আগষ্ট শুরু হওয়া এই কর্মসূচি আগামী বছর ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।

ঈদগাঁও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হারুন অর রশিদ জানান, নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার ৫ নম্বর ইউনিয়নে এই কর্মসূচির আওতায় বেড়িবাঁধ, গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে রাস্তা, কালভাট নির্মিত হয়েছে। সেচ কাজে জলাবদ্ধতা নিরসনে পুকুর, খাল, নালা খননসহ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

ইসলামাবাদ ইউনিয়নের কর্মজীবী হতদরিদ্র নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা জানান, গ্রামীন মেঠো পথে পরম মমতায় কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কর্মসৃজনের কাজ পেয়ে খুশি হলেও কম সময়ে সপ্তাহ সপ্তাহ মজুরীর টাকা পরিশোধের দাবী জানান তারা।

ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, বিগত বছরে এ ধরনের কাজ পায়নি নারী, প্রতিবন্ধি ব্যক্তি ও দু:স্থ মানুষ। বর্তমানে প্রকল্পটির আওতায় হতদরিদ্ররা কাজ পেয়ে খুশি।

শিশু সুরক্ষা ও মাতৃদুগ্ধ দান কেন্দ্রে কর্মরত নারী শ্রমিক জানান, কর্মজীবি অনেক নারী শ্রমিক শিশু নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছে। শিশুদের সুরক্ষায় স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী ‘শিশু সুরক্ষা ও মাতৃদুগ্ধ দান কেন্দ্র। এখানে শিশুদের রেখে কাজ করছে নারীরা, আর তাদের শিশুদের সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। এতে করে নিশ্চিন্তে মাঠে কাজ করতে পারছে কর্মজীবি নারীরা।

জালালাবাদ ইউনিয়নের উপকারভোগী নারী ও পুরুষরা জানান, দ্রব্যমুল্যে উর্ধ্বগতির এই সময়ে কর্মসৃজন কাজ তাদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাড়িয়েছে। তারা মজুরির টাকা দিয়ে সন্তানদের ভালো খাবার দিচ্ছে পারছে, স্কুলের বেতন দিতে পারছে, হাস মুগরী পালন ও কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছে বলে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জানান তারা।

ঈদগাঁও উপ সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, মজুরি কম হওয়ায় দুর্গম ওয়ার্ডগুলোতে শ্রমিক পাওয়া কষ্টের ছিল। বর্তমানে দৈনিক মজুরি জনপ্রতি ৪০০ টাকা হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে কাজের আগ্রহ বেড়েছে। কর্মসৃজনের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে এলাকার চিত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা এর সুফল ভোগ করছেন।

ইজিপিপি প্লাস কর্মসূচির কনসালটেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেন, দরিদ্র ও দুঃস্থ পরিবারের আয় ও খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্যোগঝুঁকি কমানোসহ শ্রমিক ও কাজের পরিধি আরো বাড়ানো গেলে দরিদ্র জনগোষ্টি উপকৃত হবে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কাছে পরাম্পর্শও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই কর্মসুচির শ্রমিকরা মজুরী পাচ্ছে নগদ একাউন্টের মাধ্যমে। ‘সরকার টু পারসন’ মজুরি টাকা নগদ একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হওয়ায় অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। এতে কাজে স্বচ্ছতা এসেছে।

কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, ঈদগাঁও, জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডে এক যোগে ৩৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়ায় হতদরিদ্রদের বসবাস। কৃষি, লবণ ও মৎস্য চাষের ওপর নির্ভরশীল এসব এলাকার জনগোষ্ঠীরা। ইজিপিপি প্লাস কর্মসুচির হতদরিদ্র ১৮৬৭ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক ৪০০ টাকা হারে সমান মজুরী পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।