ফেরত দিয়েছেন মুশফিক

না খেলেই সাকিবের পকেটে ৪৫ লাখ পারিশ্রমিক

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) বিতর্ক যেন নিয়মিত বিষয়। এবার মাঠে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বাইরে ঘনিভূত হচ্ছে কালো মেঘ। আসরের অন্যতম দল ব্রাদার্স ইউনিয়নের ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক সঠিকভাবে না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানেও একই পরিস্থিতি।

ক্রিকেটার ও স্টাফদের বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে ডিপিএলে ব্যর্থতার কারণে পারিশ্রমিকের থেকে ৩০ শতাংশ কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি এবার লীগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হুংকার দিয়েছিল। দলে ভিড়িয়েছিল জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের। কিন্তু লীগ পর্বে তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। তাতেই দারুণভাবে ব্যর্থ মোহামেডান। ১০ ম্যাচের ৫টিতেই হার

এতে তারা ছিটকে পড়ে সুপার লীগের লড়াই থেকে। আর এই ব্যর্থতার কারণেই মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটি ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের পরিশ্রমিক কর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অন্যদিকে দলটির তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান না খেলেই নিয়েছেন ৪৫ লাখ টাকা।

তবে দক্ষিণ অফ্রিকা সফরে থাকায় দলটির হয়ে খেলতে না পারায় পারিশ্রমিকের অর্থ ফেরত দিয়েছেন মুশফিকুর রহীম। অবশ্য সুপার লীগে সাকিব লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে আর মুশফিক খেলেছেন আসরের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে।

পারিশ্রমিক কর্তনের বিষয়ে মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির প্রধান মাসুদুজ্জমান দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘দল খারাপ করায় স্পন্সররা পাশে নেই। তবে টাকা আমরা দিয়ে দিবো। হ্যাঁ, যেহেতু দল ভালো করেনি সুপার লীগে যেতে পারেনি। তাই আমি ক্লাব কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখতে বলেছি যে কিভাবে পেমেন্ট দেয়া যায়। এখনো কত শতাংশ টাকা হবে বা হবে কিনা সেটি সিদ্ধান্ত হয়নি।’

জানা যায়, সুপার লীগ থেকে ছিটকে পড়ায় মোহামেডানের পৃষ্ঠপোষকদের অনেকেই এখন আর দলটির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অনেকেই অবস্থান করছেন বিদেশে। যে কারণে ক্রিকেটারদের বকেয়া ঈদের আগে দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়। ক্লাব সূত্র জানায়, ‘আমাদের ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফদের ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি যে টাকা সেটি ঈদের আগে মনে হয় দিতে পারবো না।

কারণ এরই মধ্যেতো সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আর টাকা কাটার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো নির্দেশনা সেইভাবে পাইনি যে কত শতাংশ কাটা হবে। ঈদের পরই আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিবো।’

অন্যদিকে মোহামেডানের তিন তারকা ক্রিকেটার সাকিব, মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজ দলের হয়ে একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি। তাই সুপার লীগে দল বদলে মুশফিক ও মিরাজ খেলেন শেখ জামালের হয়ে। যে কারণে মুশফিক মোহামেডান থেকে পাওয়া ২০ লাখ টাকার পুরোটাই এরই মধ্যে ফেরত দিয়েছেন ক্লাবকে।

তিনি টাকা নিয়েছেন শেখ জামাল থেকে। এছাড়াও মেহেদী হাসান মিরাজ এবার কত টাকা পেয়েছেন সেটি বলতে পারেন না ক্লাব কর্মকর্তারা। জানা গেছে আগের একটি আসরে না খেলেই ৩০ লাখ নিয়েছিলেন এই তরুণ অফস্পিনার। সেই কারণে এবার না খেলে তিনি পারিশ্রমিক নিয়েছেন কিনা তা নিয়ে ক্লাবের মধ্যেই আছে ধোঁয়াশা।

অন্যদিকে মোহামেডান ক্লাবের একটি সূত্রে জানা গেছে সাকিবের সঙ্গে ক্লাবটির খেলতেই হবে এমন কোনো চুক্তিই ছিল না। তার সঙ্গে কথা ছিল সাকিব খেলুক বা না খেলুক পাবে ৪৫ রাখ টাকা। এরই মধ্যে অগ্রীম হিসেবে সাকিব ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা গেছে জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাকিবের উপস্থিত থাকার কারণেই তাকে এই পরিমান পারিশ্রমিক দিতে হয়েছে মোহামেডানকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লাবের একটি সূত্রে জানায়, ‘আসরে সাকিবের সঙ্গে আমাদের চুক্তিই ছিল খেলুক বা না খেলুক তিনি ৪৫ লাখ টাকা পাবেন। তিনি আমাদের টিমের ক্রিকেটার, জার্সি পড়েছেন আর জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এসব কারণেই তাকে পুরো টাকা দেয়া হবে। আমরা তাকে অগ্রীম ২৫ লাখ টাকা দিয়েও দিয়েছি। বাকি ২০ লাখ টাকা পেয়েছেন কিনা তা ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা বলতে পারবেন।’

গতকাল শেষ হয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ২০২১-২০২২ এর আসর। গতকাল সুপার লীগের শেষ ম্যাচে মিরপুর শেরে বাংলায় হেরে যায় চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল। এক ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা ঘরে তোলা দলকে হারিয়ে আসরের রানার্সআপ হয়েছে লিজেন্ডস আব রূপগঞ্জ। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ১৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে। আর ২০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হুংকার দিলেও সুপার লীগেই উঠতে পারেনি। এই ব্যর্থতার পেছনে অবশ্য ক্লাবের সাধারণ কর্মকর্তারা দায়ী করছেন শীর্ষ কর্তাদের। তাদের দাবি ক্লাবটির শীর্ষ কর্তারা তাদের মতামত উপেক্ষা করে দল গঠন করেছে যাদের সুপার লীগ খেলার ক্ষমতাই ছিল না।