নিষ্পাপ হওয়ার পরও কেন বেশি তাওবাহ পড়তেন বিশ্বনবি?

ধর্ম ডেস্ক :

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘আমি কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকারী বান্দা হবো না?’ তাহলে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কী আমল করতেন?

হ্যাঁ, এ প্রশ্নের উত্তর একেবারেই সহজ। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০/১০০ বার তাওবাহ-ইসতেগফার করতেন। তিনি আখেরি নবি ছিলেন। ছিলেন সৃষ্টির সেরা মহামানবও। যার আগের এবং পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন মর্মে কোরআনে আয়াত নাজিল করা হয়েছে। তিনিই প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবাহ ইসতেগফার করতেন। কিন্তু কেন?

এ তওবাহ ইসতেগফারই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের একটি সেরা মাধ্যম। তাওবাহ প্রসঙ্গে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থাৎ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলতেন-

أَفَلَا أَكُوْنَ عَبْدًا شَكُوْرًا

আমি কি তাঁর (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হবো না।’(বুখারি)

প্রিয় নবির ছোট্ট এ ভাষা থেকেই বুঝা যায়, তাওবাহ-ইসতেগফারে শুধু গুনাহই ক্ষমা হয় না। বরং যারা আল্লাহর বিধিবিধান সবচেয়ে বেশি পালন করেন, তারা আরও বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। তারা এ তাওবাহ-ইসতেগফারের আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সন্তুষ্টকারী বান্দা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

সে কারণেই গুনাহ থেকে বিরত থাকা, গুনাহ থেকে বাঁচার প্রচেষ্টা চালানো এবং পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়াও একটি ইবাদত। যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক কর্তব্য।

মনে রাখতে হবে

মানুষকে গুনাহ থেকে ক্ষমা চাইতে হলে কিংবা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকারী বান্দা হতে চাইলে ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমেই চাইতে হবে। অমুসলিম, খ্রিস্টানদের মতো কারো মাধ্যমে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে চলবে না। বরং নিজের ক্ষমা নিজেকেই চাইতে হবে। নিজের ইবাদত নিজেকেই করতে হবে। তবেই তাওবাহ-ইসতেগফার কবুল হবে এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

তাওবাহ-ইসতেগফার

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও গুনাহ মাফে পড়তে সহজ ও ব্যাপক প্রচলিত ৫টি তাওবাহ-ইসতেগফার ও পড়ার নিয়ম তুলে ধরা হলো-

১. أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ (মিশকাত)

২. أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।’ (বুখারি)

৩. رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।’

নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

৪. أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’

অর্থ : ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’

নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

৫. সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’

নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা। চাই গুনাহ হোক কিংবা না হোক। কেননা তাওবাহ-ইসতেগফার মানুষের জীবনের সব অপূর্ণতাকে পূর্ণ করে দেয়। আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি রাজি ও খুশি হয়ে যান।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।