কক্সবাজার-৩: নৌকার মনোনয়ন পেতে ভাই-বোনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার •


কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন একাধিক নেতা। রয়েছেন এক পরিবারের তিন ভাই-বোনও। অন্যান্য নেতারা চুপিসারে লবিং ও মাঠ পর্যায়ে কাজ করে গেলেও বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তার দুই ভাই-বোনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভাই-বোনের এমন বিরোধে শঙ্কা দেখছেন জেলাবাসী।

এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ছাড়াও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোয়নের জন্য দৌঁড়ঝাপে রয়েছেন তার বড় ভাই রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং তাদের ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।

তারা সাবেক সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর সন্তান। দীর্ঘ দিন ধরে ভাই-বোনের মধ্যে অমিল লক্ষ্য করা যায়। এবং তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে রামু খিজারী স্টেডিয়ামে জনসভার আয়োজন করে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। বক্তব্যে তিনি কক্সবাজারের ব্যাপক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান তুলে ধরেন এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজে দলীয় মনোয়ন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় মনোয়নের জন্য দৌঁড়ঝাপে থাকা অন্যান্য নেতাদের নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এমপি কমল।

সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, যারা আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, তাদের এ আসনের অনেক ইউনিয়ন-ওয়ার্ডও এখনও চেনে না। জনবিচ্ছিন্ন লোকজন কীভাবে নেতা হতে চায়? আগে তারা ওয়ার্ড মেম্বার কিংবা চৌকিদার হয়ে দেখাক। সফল হলে সংসদ সদস্য নিয়ে চিন্তা করুক। মনোনয়নের জন্য চিন্তা করতে হবে না। মনোয়ন নিতে ৯ জন দৌঁড়ঝাপে থাকলেও যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং মানুষের সেবা করেন না প্রধানমন্ত্রী তাদের মনোনয়ন দেবেন না। চিন্তার কারণ নেই মনোনয়ন দূরে চলে যায়নি, কাছেই রয়েছে।

এমপি কমল তার বক্তব্যে বোন কাবেরী সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বোনটা আমার কথা শুনছে না। শুধু ফেসবুক লাইভে আজে-বাজে বিষয় নিয়ে নিয়ে আমাকে দোষারোপ করে। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হলেও সেখানে গিয়ে লাইভ করে এবং বিচার ব্যবস্থাকে অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ করে। এখন পর্যন্ত তার লাইভে কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। সবখানে গিয়ে শুধু ঝগড়া বিবাদ লাগিয়ে আসে। অপরদিকে আমার বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজলও জনবিচ্ছিন্ন একজন লোক।

সমস্ত মানুষ একদিকে, তিনি অন্যদিকে। আমি তিনবার সংসদ নির্বাচন করেছি, একবারও আমাকে সহযোগিতা করেননি। বরং ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। এবারও তিনি বলছেন, এটি নাকি আমার বিদায় ভাষণ। শুধু এমপির ভাই-বোন বলে জনগণের কাছ থেকে তারা গণপিঠুনি খাচ্ছে না।’

এই বক্তব্যের পর নাজনীন সরওয়ার কাবেরী তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেন। এমপি কমলের নাম উল্লেখ না করে ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘যার শিক্ষক পেটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে, যে পিতামাতাকে জিম্মি করে, আপন ভাইকেও হত্যা চেষ্টা করে, অর্থ কেলেঙ্কারি, খুনী ও ভূমিদস্যুদের লালন করে, তিনি তো অভিশাপপ্রাপ্ত! ভোট কেড়ে নেওয়া যার স্বভাব, নারীর সম্মানও তার কাছে গৌণ।’

স্ট্যাটাসে ‘ভোট কেড়ে নেওয়া যার স্বভাব’ শব্দটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কক্সবাজারে তোলপাড় সৃষ্টি হলে পরে কাবেরী স্ট্যাটাসটি পাবলিক থেকে অনলি মি করে রাখেন। পরে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুকে লিখেন, ‘আমি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আবার নিজেই ব্যক্তিগত করে রাখলাম। এতটুকু বুঝলাম মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলের প্রলাপ গুরুত্ব দিলে নিজের ও গন্তব্য পথ দূর্গম হয়, তবে আফসোস হয় মানুষের বিকারগ্রস্ত রুচিবোধ দেখলে। কাউকে ছোট করার চেষ্টায় কোটি টাকা জলাঞ্জলি।

মহান আল্লাহ শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। দূর্বৃত্তায়নের দূর্গ জেলায় বার বার আমার হাত দিয়ে আল্লাহ পরাস্ত করান, যা প্রমাণিত। ইতিহাসের পাতা একদিন তাদের সাথে আমার বৈপরীত্য হয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করবে। আপোষকামিতা আমার চরিত্রে না থাকলেও ধৈর্য্য চূড়ান্ত। ভবিষ্যতে সত্যের জয় প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ।’

ভাই-বোনের এমন কাণ্ড ভালোভাবে নিতে পারছেন জেলার শীর্ষ নেতারাও। তাদের এসব কাদা ছোড়াছুড়িতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভাই-বোনের কাদা ছোড়াছুড়িতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব পড়ার কথা না। একে অপরকে দোষারোপ করার বিষয়টি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়। তারপরও তারা যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, তাই সকলের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে এসব কথাবার্তা থেকে বিরত থাকার জন্য বলব।

পর্যটন শহর কক্সবাজার সদর, রামু ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-৩ আসন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে অনেকে মাঠে-ঘাটে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। দলের মনোনয়ন পেতে জাতীয় পার্টিসহ দুই দলের একাধিক নেতা মাঠে রয়েছেন।