দ্রুত হয় জোয়ার-ভাটার খেলা

পর্যটকদের সাগরে নামতে বারণ

সঞ্চিতা সীতু •

ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ কিংবা নিম্নচাপের প্রভাবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে জোয়ার বেশি হয়, আবার দ্রুত ভাটা হয়ে যায়। সঙ্গত কারণেই সাগরে ‘রেড জোন’সহ নানা সতর্কতা ঘোষণা করা হয়। এমনকি পর্যটকদের সাগরে নামতেও নিষেধ করা হয়। এসময় ছোট এবং মাঝারি আকারের সব নৌযানকে গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় সাগরে অবস্থানকালে শক্তি সঞ্চয় করে। এরপর প্রচণ্ড গতিতে তা তীরে আছড়ে পড়ে। এসময় বাতাসের গতিবেগ কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটারের বেশি থাকে। বাতাসের সঙ্গে বড় বড় ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ে। নিম্নচাপ বা লঘুচাপের সময় বাতাসের গতি এর চেয়ে কম হলেও সাগরের অবস্থা প্রায় একই রকম থাকে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র বলছে, সাগর একটি উন্মুক্ত এলাকা। স্বাভাবিক সময়ে সাগরে এক রকম ঢেউ হয়। কিন্তু যখন প্রচণ্ড গতিতে বাতাস বইতে থাকে, তখন সেখানে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। সাধারণত তিন নম্বর সতর্কতা সংকেতে এক থেকে দুই ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। সাগরে স্বাভাবিক যে জোয়ার-ভাটা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় পরিস্থিতি তার চেয়ে ভিন্ন হয়ে থাকে। এসময় দেখা যায়, হঠাৎ জোয়ারের পানিতে চার দিক প্লাবিত হচ্ছে। আবার সেটি দ্রুত সরেও যাচ্ছে। এজন্য জনসাধারণকে সাগরে নামতে নিষেধ করা হয়। তীরে দাঁড়িয়ে কেউ হয়তো দেখলো যে, পানি নেই। কিন্তু হঠাৎ পানি এসে চারপাশ প্লাবিত হতে পারে, যা তার মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সাগরে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপটি মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতের দক্ষিণ-মধ্যপ্রদেশ ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। লঘুচাপ অব্যাহত থাকায় দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। সমুদ্রবন্দরে আগের মতোই ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ১ থেকে ২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

সতর্কতা সংকেতের যে অর্থ তাতে দেখা যায়, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের অর্থ হচ্ছে— বন্দর দমকা হাওয়ার সম্মুখীন হবে। এসময় বন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেতের অর্থ হচ্ছে— বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়। এই দুটি সংকেতের সময় সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়েই সাগরে ঢেউ থাকে, যা বাতাসের বেগের সঙ্গে মিলে তীরে এসে আছড়ে পড়ে। এছাড়া সাগরে জোয়ারভাটা থাকে, যা প্রতিমাসে ঘটে। তবে সব উপকূলে একই সঙ্গে জোয়ারভাটা হয় না। একেক উপকূলে একেক সময় জোয়ার আসে। এত গেলো স্বাভাবিক অবস্থা, সাগরে যখন সিগন্যাল থাকে, তখন সাগরের আকাশে সঞ্চারণশীল মেঘের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি বাতাসে জ্বলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যায়, একসঙ্গে বাতাসের গতিও বেড়ে যায়। এতে করে ঢেউয়ের উচ্চতা এবং গতিও বাড়ে। এই গতি বৃদ্ধির ফলে উপকূলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শক্তিতে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। আবার পানিসহ সবকিছু টেনেও নেয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোরে। ফলে একজন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় সাগরে নামলে যে ঢেউ সামলান, সংকেত চলাকালে সে ঢেউয়ের চেহারা বদলে যায়, বেড়ে যায় শক্তি ও উচ্চতা দুই-ই। তাই এ অবস্থায় সাগরে নামাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আবহাওয়া অধিদফতর থেকে একটা সংকেত দিয়ে থাকি। সাগরের ভলান্টিয়ারদের এই সংকেতের অর্থ বোঝার পাশাপাশি ঝুঁকির বিষয়টিও বুঝতে এবং মানুষকে বোঝাতে হবে। না হলে শুধু সংকেত দেখিয়েই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।‘

শাহিনুল ইসলাম বলেন, `একই কারণে গভীর সাগরে বিচরণ করতে যাওয়া নৌকা এবং ট্রলারও বিপদে পড়তে পারে।‘