সরকারি প্রকল্পের কাজেও রোহিঙ্গা শ্রমিক: নেই তদারকি

এম ফেরদৌস উখিয়া :


উখিয়ায় এলজিইডি কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প কাজে স্থানীয় শ্রমিকদের জায়গায় ভাগ বসিয়েছেন রোহিঙ্গা শ্রমিকরা। এতে অসহায় হয়ে পড়েছে স্থানীয় দিনমজুর-শ্রমিক। যদিও রোহিঙ্গারা কাঁটাতারের বাহিরে যাওয়ার অনুমতি নেই সেখানে তারা গ্রামগঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্যদিকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প কাজে স্থানীয়দের বদলে রোহিঙ্গাদের দিয়ে সব কাজ করানো হচ্ছে। এসব তদারকি নেই দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে, এডিবির অর্থায়নে উখিয়া এলজিইডি কর্তৃক চলমান প্রকল্পে জামতলী রাবার ড্রেমের পার্শ্ববর্তী এলাকায় খাল খনন ও গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজে অসংখ্য রোহিঙ্গা শ্রমিক রাত-বিরেতে কাজ করে যাচ্ছে।

ঐ এলাকার স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে নিজেরা আজ বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। সব দিকে তাদের অবাদ বিচরণ। তারা আমাদের পেঠে লাথি মারছে। আমাদের এলাকায় এসে তারা আমাদের কর্মস্থলে ভাগ বসিয়েছে। এখন আমাদের কি হবে..? প্রশ্ন রাখলাম সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

জানা যায়, চন্দনাইশের ঠিকাদার আব্দুল জাব্বার চৌধুরী প্রকল্পটি পেলেও সাব-কন্ট্রাক্টর দ্বারা এসব গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ চালিয়ে নিচ্ছে কোন তদারকি ছাড়াই। রোহিঙ্গা শ্রমিকরা যেন স্থানীয়দের শ্রমবাজারে ব্যাঘাত না ঘটায় সেদিকে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও উখিয়ার এলজিইডির এ প্রকল্প কাজে তা মানা হচ্ছে না।

এদিকে স্থানীয় অসংখ্য দিনমজুর-শ্রমিক বেকার থাকলেও তাদের কোন কাজে লাগানো হচ্ছে না। বরং অল্প কিছু কমিশন নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অদক্ষ শ্রমিক এনে এসব কাজ চালিয়ে নিচ্ছে সাব-কন্ট্রাক্টররা। এ নিয়ে ঠিকাদার আব্দুল জাব্বারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি। এছাড়া যারা সাব-কন্ট্রাক্টর ছিল তারাও এসবের উত্তর দিতে নারাজ।

এ কাজে নিয়োজিত এক রোহিঙ্গা শ্রমিককে কক্সবাজার জার্নালকে বলেন, আমরা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসেছি কাজের আশায়। এনজিও থেকে যে রিলিফ দেওয়া হয় তা আমাদের পোষায় না। তা ছাড়া আমাদের যারা কাজের সন্ধান এনে দেয় তাদের আমরা একটা কমিশন দিয়ে থাকি। সেই কমিশনের আশায় সবাই আমাদের কাজ দেয়। এইখানে যারা মাঝি রয়েছে সবাইকে আমরা বেতনের টাকা থেকে কিছু টাকা দিয়ে থাকি।

সুশীলদের মন্তব্য,রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়ার শ্রমবাজার ও ব্যবসা নিয়ে নানান জটিলতায় ভোগছে স্থানীয় দিনমজুর-শ্রমিকরা। যেদিকে যায় সেদিকে রোহিঙ্গাদের ছড়াছড়ি। মাঠে-ঘাটে রোহিঙ্গা শ্রমিকের ভিড়ে স্থানীয় শ্রমিকরা অসহায় হয়ে পড়েছে। উখিয়ার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে রোহিঙ্গারা অবাদ বিচরণে করছে তাদের নিয়ন্ত্রণে কোন তদারকি নেই। এমন হলে স্থানীয় শ্রমিকরা কি করবে। তারা তো পথে বসবেই নিশ্চিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামতলীর এক স্থানীয় শ্রমিক বলেন, কিছুদিন মৌসুমের বুরো ধান কাটার কাজ ছিল সেখানেও ৫ জন রোহিঙ্গা ২ জন মাত্র স্থানীয়। ৩ দিনে সব কাজ শেষ এখন কোন কাজ নেই। আমি দিনে এনে দিনে খায় আমার পরিবার সম্পন্ন আমার উপর নির্ভরশীল। আমাদের কর্মস্থলকে যেভাবে রোহিঙ্গারা দখল করেছে এতে মনে হয় না আমরা দিনমজুর করে সংসার চালাতে পারব। এ বিষয়ে সরকারের কাছে আকুল আবেদন এসবের সুস্থ-সামাধান যেন দেশের নাগরিক হিসাবে এই ন্যায্য অধিকারটুকু আমরা পাই।

এ বিষয়ে নিয়ে উখিয়া প্রকৌশলী অফিসার রুকুনুজ্জামানের সাথে একাধিকবার কথা হয় এবং তাঁকে এসব বিষয়ে বেশ কয়েকবার অবগত করার পরেও কোনো সামাধান মিলেনি।

সর্বশেষ তিনি প্রতিবেদকে জানান, কাজ নিয়েছে ঠিকাদার, আমাদের কাজ এসব বুঝে নেওয়া। সেখানে দুর্নীতি আর অনিয়ম হলে আমরা বাঁধাগ্রস্ত করতে পারি। রোহিঙ্গা নাকি স্থানীয় কাদের দিয়া কাজ করাচ্ছে সেটি আমাদের দেখার বিষয় না।