‘প্রত্যাবাসন নিয়ে তামাশা করছে মিয়ানমার’

মুহিবুল্লাহ মুহিব, বার্তা ২৪

সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা ‘তামাশা’ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

শনিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪ এ মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে রোহিঙ্গা নেতারা এ অভিযোগ করেন। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে মিয়ানমার। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

বৈঠক শেষে তুমব্রু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘সেই পুরনো গল্প শুনিয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা। আমরা বার বার বলেছি, আমাদের নাগরিত্ব না দিলে মিয়ানমার যাব না। কিন্তু তারা দ্বিতীয়বারে মতোও তামাশা করছে। তারা জানিয়েছেন, নাগরিত্ব দেওয়া হবে, কিন্তু তারা চাইলে যেকোনো মুহূর্তে নাগরিকত্ব আবার নিয়েও নেওয়া হবে। এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে আমরা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চাই। কোনো ধরনের ক্যাম্প জীবন আর চাই না। যদি ফেরত যেতে হয় তাহলে নাগরিকত্ব নিয়ে যাব। একই কথা আমরা বার বার জানিয়েছি।’

কুতুপালং ক্যাম্পের প্রতিনিধি মো. জুবায়ের বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা আগেও একই কথা জানিয়েছিল। কিন্তু আমরা যে দাবি জানিয়ে আসছি- তাতে প্রতিনিধি দল সম্মতি দেয় না। এবারও একই কথা বলছে। তাহলে আমাদের ফিরে যাওয়া কঠিন হবে। কারণ নাগরিকত্ব ছাড়া সে দেশে যাওয়া খুবই কঠিন।’

রোহিঙ্গাদের নারী প্রতিনিধি জুহুরা খাতুন বলেন, ‘নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা হা বা না কিছুই জানায়নি। নাগরিকত্ব না নিয়ে, শুধু শুধু সেখানে যেতে পারব না। তারা জানিয়েছে, এখন গিয়ে ক্যাম্পে থাকতে হবে। এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। কারণ নিজের দেশে কখনো ক্যাম্পবন্দি থাকতে পারব না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাক্ষী রেখে চুক্তিবদ্ধ হতে চাই। অবশ্যাই মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু এভাবে নয়।’

রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল

অন্যদিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের প্রধান ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিন্ট থোয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি রোববার (২৮ জুলাই) রোহিঙ্গা শিবিরে যাবেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

একই সাথে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালামও কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এরআগে মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটি সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুপুর ১টার দিকে তারা কুতুপালং এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪ এ পৌঁছান। সেখানে বিকালে রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন।

একইসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আহা সেন্টারের একটি প্রতিনিধিদলও রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে আলোচনা শুরু করছেন। রাতে রয়েল টিউলিপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

পরদিন রোববার (২৮ জুলাই) সকালে আবারও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে প্রতিনিধিদলের। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে মিটিং করে রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এরপর দফায় দফায় চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি দল পাঠালো মিয়ানমার।