বর্ণাঢ্য আয়োজনে কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন

এম.এ আজিজ রাসেল •

বর্ণাঢ্য আয়োজনে কক্সবাজারে উদযাপিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। বুধবার (১৭ মার্চ) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা করা হয়। ভোরে সরকারি, আধা—সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলিত হয় জাতীয় পতাকা।

সকাল ৯টায় অরুনোদয় স্কুল প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান৷

এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কউক চেয়ারম্যান লে: কর্নেল ফোরকান আহমদ, ডিডিএলজি শ্রাবস্তী রায়, কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানসহ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর জেলা প্রশাসক ও উপস্থিত সকলেই এই মহান নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এরপর সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। বেলা ১১টায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শিশুদের অংশগ্রহণে রচনা, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত হোটেল শৈবালের সাগরিকা রেস্তোরাঁয় পথশিশুদের সাথে কেক কেটে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এসময় সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।

বিকালে সৈকতে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে ঘুড়ি উৎসব এবং সন্ধ্যায় সৈকতে আতশবাজি ও ফানুস উৎসব। এতে অংশ নেয় হাজার হাজার পর্যটকসহ স্থানীয়রা। সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ দৌলত ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার ও জেলা জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল।

এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার সুইরিসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিশু একাডেমির শিক্ষার্থী অংশুমান রক্ষিত ও আয়েশা মনোয়ার।
সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে ছিলেন বিনয়ী, ভদ্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবন ও রাজনৈতিক দর্শন আমাদের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পারলে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

বক্তারা আরও বলেন, আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনও দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে রামু সেনানিবাস, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবসহ সরকারি, আধা—সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। এছাড়া সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন সেজেছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়।
তাছাড়া জেলাব্যাপী বঙ্গবন্ধুর আলোকিত জীবন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথ্যচিত্র, চলচ্চিত্র, আলোক প্রদর্শনী, সকল হাসপাতাল, এতিমখানা, শিশু পরিবার, জেলখানা, হতদরিদ্র মানুষের মাঝে উন্নত মানের খাবার বিতরণ এবং সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা।

জানা যায়, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয় সরকার। মুজিববর্ষ উদযাপনে কর্মসূচিগুলো কোভিড—১৯ মহামারীর কারণে নির্ধারিত সময়ে যথযাথভাবে করা সম্ভব না হওয়ায় সরকার মুজিববর্ষের সময়কাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে।