সফরের তিক্ত অভিজ্ঞতা

বিমানে বসে ক্ষুধার যন্ত্রণা!

আন্তর্জাতিক বিমানে প্রথম উঠতে যাচ্ছি। এত টেনশন এত অদ্ভুত আনন্দ, বিশ্বাস হচ্ছি ছিল না। কী উত্তেজনা ! কী ভালো লাগা ! কেউ কেউ ভোর ৪থেকে ৬টায় Jazeera Airlines কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন সারি সারি যাত্রী। বোডিং পাশ সংগ্রহ করে Chittagong Immigration Police যাত্রীদের যত প্রশ্ন করছে আমি ত টেনশনে শেষ।

নিজের দেশেই এত হয়রানি, কুয়েত ও জেদ্দা পুলিশ ত আরও খারাপ হবেই। আমি সৌদি আরব যাচ্ছি tourist visa এ। সকাল ১০.০০টাতে বিমানে উঠলাম। বুদ্ধি করে জানালার পাশে সিট নিয়ে নিলাম। আহা! আর কি লাগে? বিমানে Take off করার পর অবশ্য দেখলাম ১৭৪ সিটের বিমানে যাত্রী ১৭৪ জনই, কোন অংশ ফাকা নেই। তখন সবাই যে যার মত সিটে বসেছে! হায়রে… যাত্রীরা জাজিরা এয়ারলাইন্স রে চট্টগ্রামের লোকাল বাস বানাইয়া ফেলছে! কেউ হাটতেছে, কেউ গল্প গোজবে মেতে উঠেছে। বিমান যখন আকাশে, একটু মাথা ঘুরিয়ে পিছনে দেখি, বিমান ছাড়ার এক ঘণ্টা ও হয় নাই, টয়লেট এর সামনে বিশাল লাইন, কমপক্ষে ১০ জন দাড়িয়ে! সব যাত্রী কী ডায়াবেটিস এর রোগী নাকি!! পরে একজনের কাছ থেকে জানলাম, কেউ কেউ টয়লেটে যায় অন্য কারনে… টয়লেটের পাশে খাবার ঘর। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর খাবার পাওয়ার আশায় দীর্ঘ লাইন! হায়রে বাঙালী…!!

যাই হোক মূল কাহিনী শুনুন সফরের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিমানে বসে ক্ষুধার যন্ত্রণা। আমরা গত ১৪-০২-২০২২ ইং তারিখ সকাল ১০ ঘটিকায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নম্বর J9 536 জাজিরা এয়ারলাইন্সে করে চট্টগ্রাম থেকে কুয়েত, পরে ফ্লাইট নম্বর J9 1217 জাজিরা এয়ারলাইন্সে করে কুয়েত হয়ে জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওনা করি।। দীর্ঘ সফর কালে আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো বিমানে বসে ক্ষুধার যন্ত্রণার অনুভব। শুধু আমি নই বরং আমার মতো বহু যাত্রী এই অভিজ্ঞতার অংশিদার।

একটি মানুষ কতক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারে! একটি আন্তর্জাতিক বিমানে কত টা অমানবিক আচরণে যাত্রী নির্বাক।
চট্টগ্রাম থেকে কুয়েতের উদ্দেশ্যে বিমান উড়াল দিয়ে আকাশে সমান্তরাল/ সোজা হওয়ার পরই টুংটাং শব্দ হতে লাগলো। দেখলাম দুই জন airhostess খাবারের ট্রলি নিয়ে আসতেছে। জাজিরা এয়ারলাইন্স এর বিমানবালারা স্কাট পড়ে তাইলে! হালকা নীল রঙের শার্টস পড়ে তারা যখন খাবার বিতরণ করতে লাগলো সকল বাঙালী ট্রলির দিকে চোখ। কিন্তু কত টা নিষ্ঠুর আচরণ তা বুঝতে দেরী হলো না। এয়ার টিকেট দেখে দেখে কয়েক জনের সামনে খাবারের প্যাকেট। বাকী সবাই হতাশ। কারো মুখে কোন আওয়াজ নেই। যেহেতু সবাই ভিন দেশে প্রবাসী।

সাত ঘণ্টার জার্নি শেষে কুয়েতের বিকাল ২.৪৫মিনিটের সময় কুয়েত পৌঁছলাম। এরপর কুয়েতে ২-৩ ঘন্টা অবস্থান শেষে ফের কুয়েত থেকে জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওনা। কেউ জাজিরা এয়ারলাইন্স গেলে ক্ষুধায় কাতর হবেন। কিন্তু airhostess এরা হাসি মুখে টাটা দেবে আমরা হতাশা আর নিরাশার চাদরে পেটের ক্ষুধার জ্বালায় Thanks দিয়ে বিদায়।
যেগুলো বলে আমি আর আপনাদের মাথা নষ্ট করতে চাইছি না। অনেক মজা ও হয়েছে। এখন লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। সময় পেলে জেদ্দা-মক্কা ও মদিনার বিশেষ ভ্রমণ ঘোরাঘুরি ইত্যাদি নিয়ে লিখব।

লেখক পরিচিতি

• ইউসুফ আরমান
কলামিষ্ট ও সাহিত্যিক
ফাজিল, কামিল
বি.এ অনার্স, এম.এ, এলএল.বি
জেদ্দা, সৌদি আরব
yousufarmancox@gmail.com