বিলীন হচ্ছে পাহাড়, ভিটে বাড়ী, ফসলী জমি ও গ্রামীণ সড়ক #১৫টি স্পটে অবৈধ বালি উত্তোলন করে পাচার: করছে জয়নাল মেম্বার

বহু অপকর্মের হোতা জয়নাল গিলে খাচ্ছে পাহাড় ও খাল, ধ্বংস করছে যুব সমাজ: দৌরাত্ম থামাবে কে?

বিশেষ প্রতিবেদক •

উখিয়ার থাইংখালী খাল ও পাহাড়ের ১৫টি স্পট থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে বহু অপকর্মের হোতা ইয়াবা ডন জয়নাল মেম্বার সিন্ডিকেট। প্রশাসন মাঝে মধ্যে হানা দিলে লুটপাটকারী সিন্ডিকেট ক্ষণিকের জন্য বালু উত্তোলন বন্ধ রাখে কিন্তু অভিযানের গাড়ি চলে গেলেই ফের চলে বালু উত্তোলন।

ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন ও ভারী যানবাহন দিয়ে উত্তোলিত বালি পাচার করার ফলে থাইংখালীর তেলখোলা ৪ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক বিলীন হয়ে পড়েছে। ফলে গ্রামীণ যোগাযোগ বিপন্নের কারণে তেলখোলা মোছারখোলাসহ ২০টি গ্রামে ৫০ হাজার মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী সময় মতো বাজারজাত করতে না পারায় তাদেরকে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করতে হচ্ছে। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পালংখালী ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার জয়নাল ও বালু সিন্ডিকেটের ক্যাশিয়ার হাফেজ দিদার সহ থাইংখালির প্রায় ৫০ জনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বনবিভাগের জায়গা। তার সব অবৈধ কারবারের দেখভাল করেন তারই বিশ্বস্থ হাফেজ দিদার। কি খাল, কি পাহাড় কিছুই বাদ দিচ্ছে না জয়নাল মেম্বার সিন্ডিকেট।

এছাড়াও জয়নালের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী, ইয়াবা, বালু ও পাহাড় নিধনের অভিযোগে ওয়ারেন্ট মামলা থাকলেও আটক না হওয়ায় প্রকাশ্যেই চালাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ এবং ইয়াবা কারবারে ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় যুবকদের।

তাছাড়াও রোহিঙ্গাদের তেল, চাল, ডাল ও অন্যান্য সামগ্রীর কালোবাজারি চক্রের সাথেও জড়িত সে। কিন্তু এতকিছুর পরেও কোন অদৃশ্য শক্তির বলে ধরাছোঁয়ার বাইরে সে।

সরেজমিনে থাইংখালী ব্রীজ হয়ে তেলখোলা-বটতলী পর্যন্ত বয়ে যাওয়া খাল প্রত্যক্ষ করে স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, থাইংখালী এলাকার ১৫ সদস্যের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে এ খালটি নিয়ন্ত্রণ করে ভোগদখল করছে দীর্ঘদিন থেকে।

থাইংখালির নুর মোহাম্মদ সহ এলাকাবাসী জানান, অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের ফলে তাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি খালের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। নিজস্ব জমি জমা না থাকায় তাদেরকে বনভূমির জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে।

তারা আরো জানায়, বালি উত্তোলনের তাদের ক্ষয়ক্ষতির কথা বললে ওই সিন্ডিকেট হুমকি ধমকি প্রদর্শন পূর্বক বলে বেড়ায় তারা নাকি খালটি সরকারি ভাবে লিজ নিয়েছে।

একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বলেন, খালের একাংশ ডাক দিয়ে চৌদ্দাংশ থেকে বালি উত্তোলন ও পাচার করা হচ্ছে। জায়েছ করা হচ্ছে সরকারি অর্থের। অথচ অবৈধ পথে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্বের ঘাটতি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জয়নাল বলেন, আমাকে মামলা দেওয়া হয়েছে বনবিভাগ তাতে সমস্যা নেই কিন্তু আমি অবৈধ পাহাড়ের বালু এবং খালের বালু উত্তোলন করে যাব।

সে আরও বলেন, বনবিভাগ ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছি অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তাই পাহাড় নিধন করে এককোটি টাকা তুলতে হবে। আমাকে দমানো এতো সহজ না।

উখিয়া ভূমি অফিসের সাথে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাজ উদ্দিন জানান, তিনি বিভিন্ন সময়ে থাইংখালী সহ উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বালি ভর্তি ট্রাক, বালি উত্তোলনে ব্যবহৃত মেশিন ও বালি পাচারকারীকে আটক করে নগদ অর্থ জরিমানা ও আইনের হাতে সোপর্দ্দ করেছে। তিনি বলেন, যেকোন সময়ে বালি উত্তোলনের ব্যাপারে সঠিক দিক নিদের্শনা পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পালংখালীর তেলখোলা ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মানিক চাকমা, হেডম্যান বাউনো চাকমা ও সমাজ সর্দার শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে অবৈধ ডাম্পার দিয়ে বালু পাচার করার ফলে তেলখোলা বটতলী থেকে থাইংখালী পর্যন্ত সড়ক পথ অচল হয়ে পড়েছে। নির্মাণাধীন সড়ক গুলো বড় বড় খানা খন্দক ও গর্তে পরিণত হয়েছে। এ সড়ক পথ কবে নাগাদ উন্নয়নের আলো দেখবে তা কেউ সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারছে না। জোরালো দাবী উঠেছে নৃ-ত্বাত্তিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে থাইংখালী তেলখোলা সড়ক পাকা করণ করা হউক।

এ প্রসঙ্গে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বালি উত্তোলনের ব্যাপারে কোন প্রকার মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম জানান, থাইংখালি এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের জন্য মামলা কার হয়েছে। কিন্তু বাজারে বালির চাহিদা ও মূল্য অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে বালি সন্ত্রাসী চক্রের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব চক্রের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না সরকারের মূল্যবান বনজসম্পদ। থাইংখালী সহ উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বালি ভর্তি ট্রাক, বালি উত্তোলনে ব্যবহৃত মেশিন জব্দ করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।