বাপের ইয়াবা কারবারের হাল ধরলো সাইফুল

বার্তা পরিবেশক •

কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালিয়া এলাকার মনু সওদাগর ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সাগর হঠাৎ ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হয়ে শূণ্য থেকে লাখপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। তারা বাপ-ছেলে ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ে জেল কাটলেও অদৃশ্য কারণে বেরিয়ে ফের চালিয়ে যাচ্ছে এ কারবার।

অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের পরিবারের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। মনু সওদাগর টেকনাফ থেকে বিভিন্ন বার্মিজ মালামাল কিনে জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতেন কিন্তু এ আয়ে পোষাচ্ছিল না তার পরিবার। টেকনাফ থেকে বিভিন্ন চোরাচালানের মাল কেনায় বিভিন্ন অলিগলি চিনে নেন তিনি। সেই সাথে চোখ যায় ইয়াবায় তাই যুক্ত হন মরণনেশা ইয়াবার সঙ্গে। প্রথমে খুচরা কারবার শুরু করেন। পরে খুচরা ইয়াবা বিক্রিতে লাভ দেখে সাহস বাড়ে তার। রাতারাতি বড় লোক হওয়ার আশায় শুরু করেন ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার পাচার। তাই নেমে পড়েন বৃহৎ চালানে। মাত্র কয়েক বছর এ মাদক বেচাকেনা করে আমূল পরিবর্তন আসে তার পরিবারে। কিন্তু অবৈধ এ মাদক কারবার করতে গিয়ে পুলিশ ও ডিবির কাছে ধরা পড়ে যান চারবার।

এদিকে তালিকার শীর্ষে থাকা অনেক ইয়াবা ডন ও তার বাবা গ্রেপ্তারের পরও নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বাবার দেখানো ইয়াবা কারবারের হাল ধরেন ছেলে সাগর। তারই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন সাগর। যার ফলে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে প্রকাশ্যে পাচার করছে কাড়িকাড়ি ইয়াবা। ধ্বংস হচ্ছে দেশ তথা দেশের যুব ও ছাত্রসমাজ। পরে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে সাগর আটক হলেও কিছুদিন জেল কেটে বেরিয়ে ফের লেগে যান এই ব্যবসায়। আর তাতেই ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের। অথচ কয়েক বছর আগেও ছিলোনা কিছু। বর্তমানে গোয়ালিয়ায় গড়ে তুলছেন আলিসান বাড়ি। নিত্যনতুন কিনছেন বাইক। অথচ আগের থাকার জায়গাটা জরাজীর্ণ। এখন লাখ লাখ টাকার জায়গা কিনেছেন। এছাড়াও তার নামে-বেনামে রয়েছে অনেক সম্পদ।

এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা মাদক কারবারিদের তালিকায় নাম না থাকা এদের এলাকায় চেনে ‘ইয়াবা মনু ও সাগর’ নামে।

এলাকাবাসীরা বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে পুরাতন রোহিঙ্গাদের যোগসাজশে তাদের হাতে নিয়ে মনু সওদাগর বৃহত্তর সিন্ডিকেট গড়ে তোলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাড়ি হাড়ি ইয়াবা পাচার, সোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় বার্মিজ পণ্য এনে বাসায় মজুদ করে অবৈধ ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মনু সিন্ডিকেটের ইয়াবার চালান নিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন পাচারকারী জেল হাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে। মনু ও তার ছেলে ইয়াবা নিয়ে বেশ কয়েকবার ধরা পড়লেও অদৃশ্য কারণে বের হয়ে যায়।

অন্যদিকে মনু সওদাগর ও তার ছেলে সাগরের নেটওয়ার্ক বিশাল হওয়ায় ধরা পড়েও বারংবার আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মনু পার্শ্ববর্তী রোহিঙ্গাদের শীর্ষদের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তোলার পাশাপাশি এলাকার উঠতি বয়সী যুবকদেরকে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বৃহত্তর সিন্ডিকেট তৈরি করে সারা দেশ ব্যাপী লাখ লাখ পিস ইয়াবা পাচার করে গড়ে তুলেছে কালো টাকার পাহাড়।

ইয়াবার ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম (সাগর) কোন সদুত্তর না দিয়ে  বিরক্তি প্রকাশ করে কল কেটে দেন।

এদিকে, স্থানীয় সচেতন মহলরা বলেন, ইয়াবা কারবারিদের মতো জঘন্য মাদক ব্যবসায়ীদেরকে গ্রেপ্তার পূর্বক কঠিন শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য ও তাদের যারা রক্ষাকর্তা আছে তাদের আইনের আওতায় আনতে এবং সেই সাথে তাদের অবৈধ পথে অর্জনকৃত সম্পদ ও আয়ের অনুসন্ধান করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

পূর্ব গোয়ালিয়া পালং এলাকার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, সাগর ও তার বাবা প্রকৃত ইয়াবা কারবারি তা এলাকার মানুষ অবগত রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করা মাদক কারবারিদের তালিকায় তারা শীর্ষে রয়েছে।

সূত্রমতে, ইয়াবা মনু ও তার ছেলে সাগরের নেতৃত্বে পুরো জেলায় বিভিন্ন সিন্ডিকেট মোটা দাগের ইয়াবা লেনদেন ও পাচার কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এ কাজে পারদর্শী বিত্তহীন থেকে লাখপতি হওয়া উক্ত মনু নিজেকে একজন পরিশ্রমী ব্যবসায়ী বলতে ব্যস্ত।

এলাকাবাসী আরও জানায়, গোয়ালিয়ায় অপরাধজগতের অন্যতম ইয়াবা ব্যবসায়ী মনু ও তার ছেলে সাগরকে গ্রেপ্তারে বেরিয়ে আসবে ইয়াবা পাচারসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

রামু থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান। মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবেনা।