কক্সবাজারে আটক দুই প্রতারকের স্বীকারোক্তি

বেগম রওশন এরশাদ ও নায়ক আলমগীরসহ অনেকের কাছেই টাকা নিয়েছি…

বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নামে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্রের দুই সদস্য।

শনিবার রাত ৯ টার দিকে কক্সবাজার সাগর পাড়ে পুলিশের হাতে আটক হন প্রতারকদ্বয়। আটক প্রতারকদ্বয় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পত্নী বেগম রওশন এরশাদ এমপি, চিত্র নায়ক আলমগীর, কর্ণেল তাহেরের ভাই নেত্রকোণার এমপি ওয়ারিশ উদ্দিন বেলাল সহ আরো অনেকের নামে চাঁদা আদায় করেছেন।
আটক প্রতারকদ্বয় হচ্ছেন সোহেল আহমদ শেখ (৩৮) ও গোলাম মোস্তফা শেখ (৩৬)। তারা সিরাগঞ্জ সদরের দরগা রোড এলাকার বাসিন্দা। আটক সোহেল আহমদ শেখ হচ্ছেন ওই এলাকার মৃত করিম উদ্দিন শেখের পুত্র এবং গোলাম মোস্তফা শেখ হচ্ছেন মোঃ শামশুল আলম শেখের পুত্র।

প্রতারকদ্বয় দীর্ঘদিন ধরেই মোবাইলে প্রতারণার মাধ্যমে দেশব্যাপি নানা কৌশলে চাঁদা আদায় করে আসছেন। আটক হবার পর শনিবার রাতে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন যে, বেগম রওশন এরশাদ এমপি’র নিকট থেকে ঈদুল আযহার আগে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম দিয়ে বেগম রওশনের নিকট থেকে টাকা আদায় করা হয়।

আটক প্রতারকদ্বয় নেত্রকোণার এমপি ওয়ারিশ উদ্দিন বেলাল (কর্ণেল তাহেরের ভাই) এর নিকট থেকে আদায় করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এমনকি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আলমগীরের নিকট থেকে তারা ৫ হাজার টাকাও আদায় করেন। কক্সবাজারে ডেরা পেতে এই প্রতারক চক্র আদায় করেছেন স্থানীয় একজন পৌর কাউন্সিলর এবং ব্যবসায়ী সহ আরো অনেকের নিকট থেকে বিপুল অংকের টাকা।
কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়–য়া জানান, প্রতারকদ্বয় স্বীকার করেছেন যে, তারা একই দলে ৫ জন রয়েছেন। সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। তাদের একজন নিরক্ষর, একজন এসএসসি ও অন্য তিনজন প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। গত ৫ বছর ধরে এমন প্রতারণা করে যাবার কথা তারা স্বীকার করেছেন।
এরিমধ্যে কয়েকবার ধরা পড়ে কারাগারে আটকও ছিলেন। দলের তিন সদস্যকে পুলিশ আটকের জন্য খুঁজছেন। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেগম রওশন এরশাদ সহ অন্যান্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা স্বীকার করেছেন। দলের তিন সদস্যকে পুলিশ আটকের জন্য খুঁজছেন। প্রতারকদ্বয় এমনও বলছেন যে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই এ রকম ফাঁদ বসিয়ে টাকা আদায় করছেন। যার তালিকা অনেক দীর্ঘ।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেছেন, প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে প্রতারকদ্বয়কে আটক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চক্রের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ সুপার প্রতারক চক্রের সদস্যদ্বয়কে আটকের নেপথ্য কাহিনীর বিবরণ দিয়ে বলেন, সর্বশেষ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের নাম দিয়ে বায়োফার্মা নামের একটি ঔষধ কম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চাঁদা দাবি করাই তাদের (প্রতারক) জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান-‘ গত শনিবার কক্সবাজারের বিএমএ’র (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন) সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহবুবুর রহমান আমাকে চাঁদা দাবির তথ্যটি জানান। বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি’র একটি নম্বর থেকে প্রতারকরা কম্পানীটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট রোহিঙ্গা শিবিরের ত্রাণ কার্যক্রমের কথা বলে আমার নামে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।’