প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষায় হেলপ কক্সবাজার’র পদক্ষেপ

আবদুল্লাহ আল আজিজ,কক্সবাজার জার্নাল •

পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজেদের নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েও নিজেদের প্রমাণ করেছেন সফল হিসেবে। শত প্রতিকুলতাকে জয় করে হয়েছেন বিখ্যাত। গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছেন নিজেদের উজ্জ্বলতা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং সঠিক প্রশিক্ষণ তাদের নিয়ে গেছে সফলতার শিখরে। তাই প্রতিবন্ধীরাও অন্য সবার মত সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে নিজেদের কাজে লাগাতে পারবে। আর প্রতিবন্ধকতা যে অক্ষমতা নয়, তা প্রমাণের লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে উখিয়ায় একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার।

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য হেলপ কক্সবাজার নিরলসভাবে কাজ করছে।

তারই ধারাবাহিকতায় ব্রাকের সহযোগিতার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামে প্রতিবন্ধীদের জন্য ডিজেবল লিডারশীপ লার্নিং সেন্টার করা হয়েছে।

এই সেন্টারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ,চিত্ত বিনোদন, খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়াও এই সেন্টারে প্রতিবন্ধীদের জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, তাদের জীবন দক্ষতা, লিডারশীপ, অধিকার, অধিকার এবং নেতৃত্ব দানের বিভিন্ন দিক, তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণের উপায় এবং তাদের জড়তা নিরসনে সেশনও পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা সেখানে শিখছে ও জানছে।

ডিজেবল লিডারশীপ লার্নিং সেন্টারে এসে বাহারি ডিজাইনের কাগজ দিয়ে ফুল বানিয়েছে প্রতিবন্ধীরা

ডিজেবল লিডারশীপ লার্নিং সেন্টারে আসা গুলজার বেগমের (৪৫) সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের।

পাইন্যাশিয়া গ্রামে ডিজেবল লিডারশীপ লার্নিং সেন্টার হওয়াতে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারিরীক ভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন ছিলো। সবার সাথে কথা বা মিশতে পারতাম না। নিজের মধ্যে একধরনের লজ্জা কাজ করতো। কিন্তু এই সেন্টার হওয়ায় আমরা অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি। জানতে ও শিখতে পারছি অনেক কিছু। সবার সাথে ভালো সময় কাটাচ্ছি।

ডিজেবল লিডারশীপ লার্নিং সেন্টারে আসা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রুকসানা আক্তার (১৩) কাগজ দিয়ে ফুল বানাচ্ছেন আপন মনে এবং খুব সুন্দর ছবিও আঁকে সে। বানানো শেষে সেন্টারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাগজ দিয়ে তৈরি ফুল ও ছবি লাগাচ্ছেন বিভিন্ন কর্ণারে। যা সেন্টারকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে।

প্রতিবন্ধীদের সাথে কথা বলছেন হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, সবার আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য নেওয়া সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের ওপর আরোপিত বাঁধা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধ্যানধারণা দূরীকরণে আমরা সচেষ্ট। তাদের ক্ষমতায়নে সরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের মূলধারায় আনতে আমরা সচেষ্ট। সেজন্য জালিয়াপালং এ তাদের জন্য ডিজেবল লিডারশীপ লার্নিং সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিজেবল লিডারশীপ লার্নিং সেন্টারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে ডিজেবল কেয়ার ইউনিট, কাউন্সিলিং, সাধারণ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ার ব্যবস্থা,চিকিৎসা সেবা।

‘এছাড়া রয়েছে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা, বিনোদন, এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্তৃক করা বিভিন্ন কাজের প্রদর্শন ব্যবস্থা এবং তাদের দক্ষ করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো’।

আমরা জালিয়া পালং ইউনিয়নের সকল প্রতিবন্ধীদের মাঝে যারা আইডি কার্ড পাইনি তাদেরকে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে কার্ড পাওয়ার জন্য উদ্যোগ এবং যারা ভাতা পাচ্ছেন না তাদেরকে ভাতা পাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি।

আমাদের লক্ষ জালিয়াপালং ইউনিয়নের সকল প্রতিবন্ধীদের জন্য আইডি কার্ড ও ভাতা নিশ্চিত হবে।