বড় ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে চকরিয়া পৌর নির্বাচন সম্পন্ন

এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া •

বড় ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বহুল প্রতিক্ষিত কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচন।

করোনার কারনে দু’দফা পেছানোর পর প্রথম বারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতেই সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিন সকাল থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়।

সকাল ৮টা থেকে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ১৮টি ভোট কেন্দ্রে যথারীতি ভোট গ্রহন শুরু হয়। ভোটারদের উপস্থিতির কারণে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং, পোলিং ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের এজেন্টরা কাটিয়েছেন ব্যস্ততম সময়। সকাল ৮টার দিকে ভোট কেন্দ্র গুলোতে বিপুল সংখ্যক নারী ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও তেমন দেখা যায়নি পুরুষ ভোটারদের।

তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরুষ ভোটারের উপস্থিতিও লক্ষ্যনীয় ছিল।  আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টার দিকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী রেজাউল করিম ও সাইফুল সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরে ওই কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়।

সোমবার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ১৮টি ভোট কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র ফুটে  উঠে।

সকাল সাড়ে ৮টায় চকরিয়া পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের চকরিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়  কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় পুরুষ ভোটার তেমন উপস্থিত না থাকলেও নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোট কেন্দ্রের বাইরেও ছিল প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সরব উপস্থিতি। একই চিত্র ফুটে উঠে কাহারিয়াঘোনা কেন্দ্রে। সকাল ৯টার দিকে এ ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলমগীর চৌধূরী। পরে ভোট দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জানিয়ে কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারদের কাছে দোয়া চেয়ে বের হয়ে যান। একই সময়ে পালাকাটাস্থ নিজস্ব ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন নাগরিক কমিটি ব্যানারে নারিকেল গাছ প্রতীকের সতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জিয়াবুল হক।

এ সময় তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রিয় চকরিয়া পৌরবাসি, আসসালামু আলাইকুম। আজ আপনাদের উৎসবের দিন। উৎসবমূখর পরিবেশে সবাই ভোট দিন পছন্দের প্রার্থীকে। আমার চাওয়া ছিল শুধু এই আমেজ ফিরিয়ে দেয়া। শুধু ভোটকেন্দ্রে যাবার সময় খেয়াল করে দেখবেন পাঁচ বছরে কেমন নাগরিক সুবিধা ভোগ করেছেন। যে রাস্তা দিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছেন সে রাস্তা কি একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার রাস্তা হতে পারে কিনা। একটি আধুনিক পৌরসভা গড়তে ভোটারদের সারাদিন নারিকেল গাছ মার্কায় ভোট দেয়ারও আহবান জানান সতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জিয়াবুল হক।

সকাল ১১টার দিকে লক্ষ্যারচর চরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে নারী ও পুরুষ ভোটারদের লক্ষ্যনীয় উপস্থিতি।

ভোটারা সারিবদ্ধভাবে লাইনে দঁাড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। দুপুর ১টার দিকে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে নারী ও পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। দুপুর ২টার দিকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুকপুকুরিয়া ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে বৃষ্টিতেও ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। তার লাইনে দঁাড়িয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে ভোট দিচ্ছেন।

এছাড়া আর রায়েদ মাদ্রাসা, চকরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়,দক্ষিণ লক্ষ্যারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাটাখালী দ্বিতীয় সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়, প্রদীপালয় (সার্ভ স্কুল) করাইয়াঘোনা ও কাহারিয়াঘোনা পুরাতন জামে মসজিদ সংলগ্ন মোহাম্মদীয়া হেফজখানা, চকরিয়া কেন্দ্রিয় উচ্চ বিদ্যালয়, চকরিয়া পৌর আদর্শ শিক্ষা নিকেতন, নিজপানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পালাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম দিগর পানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য কেন্দ্র গুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া পৌর এলাকার ভোট কেন্দ্র গুলোতে ভোটররা নির্ভয়ে ও স্বতৎস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনের দিন ৯টি ওয়ার্ডের ১৮টি ভোট কেন্দ্রের  সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বিপুল সংখ্যক র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এছাড়া ১২জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করেন। বিপুল সংখ্যক আহনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকায় কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবী করেন তিনি।

উল্লেখ্য চকরিয়া পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ১৮টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৭২৪জন। তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ৮৯৯ জন পুরুষ ও ২২ হাজার ৮২৫ জন নারী ভোটার ছিল। সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র পদে ৪জনসহ সংরক্ষিত নারী ও পুরষ কাউন্সিলর পদে ৬৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।