‘বড় হয়ে গেছি’ বলে চলে গেল নাঈম

ডেস্ক রিপোর্ট •

বাবার আর্থিক কষ্ট বুঝত নাঈম হাসান; তাই কলেজে যাওয়ার সময় টাকা নিতে চায়নি; এই তরুণের মৃত্যুর পর এখন সেই কথাটিই বড় হয়ে বাজছে বাবা শাহ আলমের মনে।

ছেলের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বিলাপ করে তিনি বলছিলেন, “বাবা আর নটর ডেমে যাবে না! চলে গেল আমাকে ছেড়ে! আজ সকালেও আমাকে বলছিল- বাবা কলেজে যাইতে আর টাকা দেওয়া লাগবে না, আমি তো বড় হয়ে গেছি’।”

বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়ে জরুরি বিভাগের মর্গে ছেলের লাশ দেখতে পান শাহ আলম।

কলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে ট্রলির উপর রাখা ছেলের নিথর দেহটি দেখে প্রথমে নির্বাক হয়ে যান তিনি। কোনো শব্দ না করে চেয়ারে বসেছিলেন অনেকক্ষণ। তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন।

নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাঈম থাকতেন কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটে; স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ আলমের বসবাস। বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে নিয়ে ঢাকার নীলক্ষেতে ‘সৈনিক বুক সেন্টার’ নামে একটি বইয়ের দোকান খোলেন শাহ আলম। তবে মহামারীতে তার ব্যবসা প্রায় ডুবতে বসে।

আল আমিন নামে ওই মার্কেটের একজন দোকানি বলেন, নীলক্ষেতের কাছেই ইউনিভার্সিটি গভর্নমেন্ট ল্যবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে নাঈম। তখন প্রায়ই বাবার দোকানে আসতেন। ছোট্ট দোকানের ভেতরে বাবা শাহ আলম প্রায়ই নিজ হাতে ছেলেকে খাইয়ে দিতেন। দুই ছেলেকে ঘিরেই ছিল শাহ আলমের জগৎ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সন্ধ্যায় নাঈমের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর দাফনের জন্য লাশ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে নেওয়া হবে বলে জানান নিহতের বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মুনতাছির মামুন।

নাঈম (১৭) বুধবার দুপুরে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান।

নাঈমের মৃত্যুর সংবাদে হাসপাতালে ছুটে আসে তার বন্ধুরা। নটর ডেমের ছাত্র তাওফিক বলেন, “মর্নিং সেশন সাধারণত বেলা সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। তবে আজ ক্লাস শেষ হয় একটু আগে। বেলা সাড়ে ১১টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।”

তাওফিকসহ নিহতের বন্ধুদের অভিযোগ, ট্রাক ধাক্কা দেওয়ার পর নাঈমের দেহটি দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিল।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ভিন্ন কথা। দুর্ঘটনাস্থলের পাশের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা শরিফ বলেন, ময়লার ট্রাকটি পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিক থেকে আসার পথেই ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই পথচারী ও ফুটপাতের দোকানিরা ছুটে যান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এনামুল হক মিঠু বলেন, এই সড়ক দিয়ে শতশত মানুষ প্রতি মুহূর্তে যাতায়াত করে। ঘটনা ঘটার পরপরই তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সহপাঠি নিহত হওয়ার পর ঢাকার গুলিস্তানে সড়ক অবরোধ করেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল ৫টার দিকে শিক্ষকরা এসে নিয়ে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকদের কথায় অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে তারা নিহত সহপাঠী নাঈম হাসানের পরিবারের ভরণপোষণের দাবি জানান।

এদিকে এই দুর্ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।