ভাগ্নির পর বিয়ে করে খালাকে, এরপর থেকে তিনি বউ পাগল

ডেস্ক রিপোর্ট – অভিমানী স্ত্রীকে বোরখা পড়ে খুঁজতে বের হয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বউ পাগল এক স্বামী। শিবচর থানায় মামলা দায়েরের পর হারুন মুন্সী নামের ওই ব্যক্তিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এতকিছুর পরও বউয়ের সন্ধান পাননি তিনি।

আটক হারুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের চরঘুনচি গ্রামের ছালাম মুন্সীর একমাত্র ছেলে হারুন মুন্সীর সঙ্গে প্রায় ২০ বছর আগে বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক হয়। একবছর পর শান্তি (ছদ্ম নাম) নামের ওই গৃহবধূর ভাগ্নির সঙ্গে বিয়ে হয় হারুনের। কিন্তু বিয়ে করা বউয়ের চেয়ে তার খালা শান্তির ওপরই টান বেশি ছিল হারুনের। ফলে বিয়ের এক বছরের মাথায় হারুনের সংসার ভেঙে যায়। এর পরের বছর ২ সন্তানের জননী শান্তিকে নিয়ে ঘর ছাড়ে হারুন। মুন্সীগঞ্জে গিয়ে ঘর বাধে তারা। মা-বাবা একমাত্র ছেলের এই বিয়ে মেনে না নিলে রং মিস্ত্রির কাজ করেই চলতো হারুনের সংসার।

২০১২ সালে মা-বাবার কথা ও মায়ের করা মামলায় কারাবাসের কারণে শান্তিকে ডিভোর্স দেয় হারুন। এরপর ৬ মাসের মধ্যে আরেক নারীর সঙ্গে বিয়ে হয় হারুনের। কিন্তু সেই সংসারও বেশিদিন টেকেনি তার। আবারও শান্তির কাছে ফিরে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে বিয়ে করে হারুন। এরই মাঝে গত বছর শান্তির ছেলে বিদেশে যায় ও মেয়েরও বিয়ে হয় শিবচর। ছেলের বিদেশ গমন ও মেয়ের বিয়ের পরই বাধে বিপত্তি। ৬ মাস আগে মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে গা ঢাকা দেয় শান্তি বেগম (৪৫)। মোবাইলে কথা বলে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করেও শান্তিকে না পেয়ে হারুন হয়ে যায় পাগল প্রায়। সঙ্গে ছিল শান্তির পরিবারের হুমকি ধামকি। এরই মাঝে হারুন জানতে পারে শান্তি শিবচরেই অবস্থান করছে। শান্তিকে খুঁজতে ও সে যাতে না পালিয়ে যেতে পারে সেজন্য হারুন সিদ্ধান্ত নেয় বোরখা পড়ে শিবচরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজবে স্ত্রীকে। সেই মোতাবেক ঢাকার শাহাদাতপুর থেকে কেনেন বোরখা হাত মোজাসহ মেয়ে সাজার নানান সামগ্রী।

শনিবার সকালে তিনি ব্যাগ ভর্তি ওইসব সামগ্রী ভরে রওনা দেন শিবচরের উদ্দ্যেশে। শিমুলিয়া থেকে লঞ্চে পার হয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে পৌঁছানোর পর লঞ্চেই পড়ে নেয় মহিলার ভূষণ। রোববার দুপুরে শিবচর পৌরসভার হেলিপ্যাড এলাকায় এসে ঘরে ঘরে ঢুকেই মহিলা কণ্ঠে খোঁজা শুরু করেন স্ত্রীকে। ৭/৮টি ঘর খোঁজার পর এলাকার নারীদের বিষয়টি সন্দেহ হলে বের হয় মুখোশধারী হারুনের আসল রুপ। কিন্তু বউ পাগল স্বামীর ভাগ্যে বউ না জুটলেও জুটে গণপিটুনি।

একপর্যায়ে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে পুলিশ হারুনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে এসব কাহিনী। তার কাছ থেকে শান্তির সঙ্গে নিকাহনামাও পাওয়া যায়।

হারুন মুন্সী বলেন, ‘আমার বড় বউ দেখতে কালো হলেও ও আমার অনেক যত্ন নেয়, ভালোবাসে। ওর ছেলে বিদেশ যাওয়া ও মেয়ের বিবাহ দেয়ার পর ও পাল্টাইয়া গেছে। ৬ মাস ধইরা আমার ফোনও ধরে না। তাই বোরখা পইরা মহিলা সাইজা খুঁজতে আইছি। যাতে ও আমারে দেইখা না পালাইয়া যায়। আমি কাউরেতো বিরক্ত করি নাই। বোরখা পড়ে মহিলা কণ্ঠে খুঁজতেছিলাম। সারাদিন খুঁজলে ঠিকই পাইতাম। তারা আমারে দিল না খুঁজতে। ছেলেদের জুতা পড়ায় ও কণ্ঠের কারণে ধরা খেলাম। ওরে (শান্তি) ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগে না। পুলিশরে আমারে ছাড়তে বলে দেন।

শিবচর থানা পুলিশের ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, ছদ্মবেশে হারুন ওই এলাকায় ঘরে ঘরে প্রবেশ করে। এলাকাবাসী তাকে ধরে আমাদের কাছে দিয়েছে। সে বউকে খুঁজছে বলছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।