ভালবাসার বিয়ের অবসান দুইজনের আত্মহত্যায়

ডেইলী কক্সবাজার •

প্রথমে প্রেম, ভালবাসান। দীর্ঘ দেড় বছরের প্রেমের অবসান ঘটে ঢাকার কামাঙ্গীচরের আফিয়া আক্তার ও আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল হৃদয়ের বিয়ের পরিণতির মাধ্যমে। তারও ৫ মাস পর অভিমানের শুরু।

একটু একটু করে জমে থাকা অভিমানের শেষ হয় ২০২১ সালের ২৯ জুন। সেদিনই আফিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মামলায় জেলও গিয়েছেন হৃদয়। তিন মাস পর জেল থেকে বের হয়ে স্ত্রী হারানোর বেদনায় ভুগছিলেন হৃদয়। এক পর্যায়ে কক্সবাজার ভ্রমনে এসে রিসোর্টে আত্মহত্যা করেন হৃদয়ও।

গেল ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার দুুপুরে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের সিকদার রিসোর্ট থেকে হৃদয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল হৃদয় বিডিয়ার বিদ্রোহে দন্ডপ্রাপ্ত সাবেক সুবেদার আলী আকবরের একমাত্র ছেলে। দুই বোনের একমাত্র ভাই ছিল হৃদয়।

মরদেহ নিতে এসে কাছে হৃদয়ের জীবনের এসব বর্ণনা দিয়েছেন তার ভগ্নিপতি জাহেদুল ইসলাম।

তিনি জানান, আফিয়া ও হৃদয়ের সম্পর্ক মেনে নিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দুই পরিবার। কিন্তু ৫ মাসের মধ্যে তাদের অভিমান চরম পর্যায়ে চলে যায়। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৯ জুন বসতঘর থেকে আফিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই সময় তার পরিবারের করা মামলায় কারাগারে যেতে হয় হৃদয়কে। সেখান থেকে তিন মাস পর বের হয়ে স্ত্রীর শোকে প্রায় অ-স্বাভাবিক আচরণ করতো হৃদয়। কিন্তু গেল বুধবার কক্সবাজার বেড়াতে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার পুলিশ খবর দেয় তার ঝুলন্ত মরদেহ মিলেছে রিসোর্টে।

মায়ের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, মৃত্যুর আগে তার মায়ের মুঠোফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা লিখেন হৃদয়। সেখানে লিখা ছিল অনেক দূরে চলে যাচ্ছি মা। স্ত্রীর আত্মহত্যার প্রায় ৯ মাস পর একই পথে হাটলেন হৃদয়ও। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে প্রায় পাগল তার মা।

আরেক ভগ্নিপতি সৈয়দ সালমান রহমান বলেন, পেশায় হৃদয় তেমন কিছু করতো না। প্রেম করে বিয়ে করলো। নিজেদের সিদ্ধান্তটা পরিবার মেনেও নিয়েছে। কিন্তু কি নিয়ে তাদের মধ্যে অভিমান ছিল তা এখন পর্যন্ত পরিবারে কেউ জানতে পারেনি।

সবশেষ স্ত্রীর মৃত্যুর পর ৯ মার পর হৃদয়ও আত্মহত্যা করলো।
এরআগে, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিকদার রিসোর্টের ১০৮ নং কক্ষ থেকে হৃদয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

হোটেল কর্তৃপক্ষ ও পরিবারের বরাত দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন জানিয়েছিলেন, বুধবার সকালে কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের সিকদার রিসোর্টে কক্ষ ভাড়া নেয় হৃদয়। বৃহস্পতিবার সকালও নাস্তা করতে দেখেছে রিসোর্টে লোকজন। কিন্তু দুপুরে বের না হওয়াই তাকে অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে দেখে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় হৃদয়ের মরদেহ আছে।

পরে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন একটা বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওই বিষয়ে তার মাকে ক্ষুদে বার্তাও পাঠিয়েছিলেন হৃদয়। সেখানে লেখা ছিল, তোমাদের ছেড়ে অনেকদূরে চলে যাচ্ছি মা।কিন্তু তার মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। তারও আসছেন। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্তারিত ময়না তদন্তের পর বলা যাবে।

এবিষয়ে ২৫ মার্চ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীরুল গিয়াস বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদও হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়না তদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কেন স্বামী-স্ত্রী দুইজনই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছেন তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ।