ভাসানচরেও ইয়াবা: আটক হলো ৪ রোহিঙ্গা!

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল •


মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা মরণনেশা ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লো ভাসানচরে নতুন বসতি স্থাপন করা ৪ রোহিঙ্গা।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করাসহ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য গত ১৯ জানুয়ারি নতুন একটি থানা উদ্বোধন করে সরকার।

উক্ত থানাটি উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার, ২৩৩ পিস ইয়াবাসহ চার মাদক কারবারে জড়িত রোহিঙ্গাকে আটক করতে করতে সক্ষম হয়।

সর্বশেষ ৭ এপ্রিল (বুধবার) ৬০৩ পিস ইয়াবাসহ নুর মোহাম্মদ নামে আরো এক রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরে আসার সময় নিজেদের জিনিসপত্রের মধ্যে করে এসব ইয়াবা নিয়ে এসেছিল তারা।

এদিকে গত ডিসেম্বর মাস থেকে ছয় দফায় সর্বমোট ১৭ হাজার ৯৯৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে স্থানান্তর করেছে সরকার।এর আগে গত বছরের মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়েছিল। সব মিলে বর্তমানে এ দ্বীপটিতে এখন ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি করছে।

ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গা নেতা নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান,উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে মাদক কারবার,খুন,অপহরন,ধর্ষনসহ নানা অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েছিল রোহিঙ্গারা। বলতে গেলে সেখানকার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল।

তাই আমরা ভেবেছিলাম ভাসানচরে এসে অন্তত শান্তিতে থাকতে পারবো। কিন্তু এখানেও ইয়াবা পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টা আমাদের জন্য খুবেই খারাপ লক্ষণ।

ভাসানচরেও যদি এই মাদক ব্যবসা অব্যাহত থাকে তাহলে উখিয়া-টেকনাফের ন্যায় এখানেও অশান্তি নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন, টেকনাফের লেদা ডেভলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম।

এই রোহিঙ্গা নেতা অভিমত প্রকাশ করে আরো বলেন, যারা সেখানে মাদক ব্যবসা চালুর চেষ্টা করছে তাদের চিহ্নিত করে তাদেরকে আইনের আওয়তাই নিয়ে এসে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া খুবেই জরুরী।

বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের দ্বীপে নেওয়ার সময় তাদের মালপত্রের ব্যাগগুলো তল্লাশী না করার কারনে মাদক কারবারে জড়িত রোহিঙ্গারা হয়তো সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।

এ ব্যাপারে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৮ (এপিবিএন) এর অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান জানান উখিয়া-টেকনাফ শিবিরগুলো থেকে ভাসানচরগামী রোহিঙ্গাদের প্রথমে উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে এনে রাখা হয়। এরপর পুলিশ পাহারায় সেখান থেকে তাদের চট্টগ্রামে জাহাজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই সময় কাউকে তল্লাশি করা হয় না। তিনি আরো বলেন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ার কারণে ভাসানচরকে কেন্দ্র করে নতুন কোন মাদকের রুট তৈরি হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের যে নেটওয়ার্ক আছে, তা পর্যবেক্ষন করলে ভাসানচরের চেয়ে আরো বিচ্ছিন্ন এলাকায় মাদক পৌছাতে সক্ষম হবে।

ইয়াবাসহ আটক রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ভাসানচরে কর্মরত (ওসি) মাহে আলম।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। আগের ও তখনকার মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বসবাস করছেন। ওই বছরের নভেম্বর মাসে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয় সরকার।

আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে। বর্তমানে ধাপে ধাপে স্থানান্তরের কাজ চলছে।