ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের যেতে ‘জোর করা হবে না’

বিডিনিউজ •

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাসন গড়ে তোলা হলেও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্থানান্তর করা হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে যেতে বাধ্য করা হবে বলে খবর প্রকাশের মধ্যে মঙ্গলবার নিজের কার্যালয়ে একদল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সরকারের এই অবস্থান প্রকাশ করেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নীতি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে না দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীও চান না তাদেরকে সেখানে যেতে বাধ্য করা হোক।”

কক্সবাজারে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে দুই দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তারা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি না হওয়ায় তা ভেস্তে যায়। বাংলাদেশ ওই ক্ষেত্রেও বলছে, জোর করে কাউকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না।

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের চার লাখের মতো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গা ঢল; এরপর নতুন আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে।

পর্যটন নগরী কক্সবাজার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মহাপরিকল্পনা থাকায় বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর অবস্থান সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্তরায় হিসেবে যেমন কাজ করছে, তেমনি রোহিঙ্গাদের কারণে সেখানকার আর্থসামাজিক অবকাঠামোও হুমকির মুখে পড়েছে।

এই অবস্থায় নোয়াখালীর বিরান দ্বীপ ভাসানচরে শরণার্থীদের জন্য আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ সরকার। নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১০ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর সহায়তায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই ভাসানচর স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। 

“সামনে ভারি বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মানবিক বিবেচনায় এই আবাসন তৈরির নির্দেশনা দেন যেন তাদের কিছু সংখ্যক হলেও সেখানে স্থানান্তর করা যায়। ”

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে জাতিসংঘের একটি দল কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

তবে এটা মূল সঙ্কটের সমাধান নয় মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “একমাত্র সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।”

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তাদের সম্মতি নিয়েই হবে জানালেও এনজিওগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই প্রত্যাবাসনে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

ঢাকায় কর্মরত কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ – ডিক্যাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকও ছিলেন।

ডিক্যাব সভাপতি রাহিদ এজাজ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিবের নেতৃত্বে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সংগঠনের যুগ্ম সচিব ইশরাত জাহান উর্মি, কোষাধ্যক্ষ মাহাদী হাসান তালুকদার ,কমিটির সদস্য আঙ্গুর নাহার মন্টি, তৌহিদুর রহমান, খুররম জামান প্রমুখ।