ভুল থেকে শেখা শেষ হয়নি ১৯ বছরেও

টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ বছরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের। কিন্তু এতদিনেও এ সংস্করণে পরিপূর্ণ দল হয়ে উঠতে পারেনি টাইগাররা। প্রতিটি বড় হারের পর অধিনায়করা বলে যান সেই পুরনো কথা, ‘আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নেবো’। বাংলাদেশের নতুন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও একই কথা শোনালেন গতকাল। ইডেন গার্ডেন্সে দিবারাত্রির টেস্টে ভারতের কাছে ইনিংস ও ৪৬ রানে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই সিরিজ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এই মানের বোলারদের সামলাতে কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন, কীভাবে খেলবেন। দল হিসেবে আমার মনে হয়, সবাই শিক্ষাটা নেবে। এ শিক্ষা পরের সিরিজে অনেক বেশি কাজে দেবে।’
ইন্দোরে প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর কলকাতাতেও শুরুটা বাজে হয় বাংলাদেশের।

প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩৪৭/৯ সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। দ্বিতীয় দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির জন্য গতকাল ৩৯ রানে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইনিংস পরাজয় এড়াতে তখনো বাংলাদেশকে করতে হতো ৮৯ রান।

গতকাল তৃতীয় দিনে আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি রিয়াদ। সকালে মুশফিক ইনিংস শুরু করেন ইবাদতকে নিয়ে। শুরুতেই উমেশ যাদবের বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইবাদত হোসেন (০)। সপ্তম ওভারে বিদায় নেন মুশফিকুরও। আগের দিনের ৫৯ রানের সঙ্গে আর ১৫ রান যোগ করে ৭৪ করে আউট হন তিনি। তার উইকেটটিও নেন উমেশ। মুশফিকের বিদায়ে জয় থেকে মাত্র ১ উইকেট দূরে ছিল ভারত। ১০ বলের মধ্যেই সেটি তুলে নেয় স্বাগতিকরা। উমেশের বলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে ফেরেন আল আমিন। বাংলাদেশ থামে ১৯৫-এ। উমেশ ৫৩ রানে ৫ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া ইশান্তের দ্বিতীয় ইনিংসেও শিকার ৪ উইকেট। ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা দুই পুরস্কারই ওঠে এ পেসারের হাতে।

গত দুই তিন বছর ধরে ভারতের পেস অ্যাটাক দুর্দান্ত। অথচ ৩-৪ বছর আগেও তারা স্পিন-নির্ভর দল ছিল। মুমিনুল মনে করেন বাংলাদেশকেও এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের স্পিন নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। আমার মনে হয়, এই সিরিজে পেসাররা খুব ভালো বোলিং করেছে। দেশে ও বাইরে নিয়মিত যখন তাদের খেলানো হবে তখন বোঝা যাবে তারা কতোটা উন্নতি করেছে। দেশে-দেশের বাইরে যদি পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয় আমার মনে হয় ওরা ধীরে ধীরে উন্নতি করবে।’

টেস্টে কেন উন্নতি হচ্ছে না? দেশের বাইরে গেলেই বড় হার দেখতে হয় বাংলাদেশকে। মুমিনুল অবশ্য ‘উন্নতি হয়নি’ কথাটা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে হয়তো উন্নতি হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে, সেখান থেকে পেস বোলার বের হয়ে আসছে। যদি পেস বোলিং ইউনিটের উন্নতি হয় তাহলে টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতি হবে। পেস বোলাররাও যখন বের হচ্ছে ধীরে ধীরে আমার মনে হয় টেস্টে আমাদের উন্নতি হবে। টেস্ট আমরা খুব নিয়মিত খেলি না। সামনের বছর আমাদের অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে। প্রায় ১০টা টেস্ট আছে। আমরা যখন টানা টেস্ট খেলবো তখন এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবো।’

অধিনায়ক হিসেবেও এই সিরিজে প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি মুমিনুল। ইডেনে দুই ইনিংসেই ডাক মারেন। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে এ বাঁহাতি বলেন, ‘আমার ব্যাটিং গড় নিয়ে বেশি ভাবছি না। দলের ফল নিয়ে হতাশ। সেটা স্বাভাবিকও। যখন এমন ফল হয় তখন খারাপ লাগা স্বাভাবিকই। হয়তো আমি এখন ভুগছি। দুঃসময় থেকেই মানুষ ভালো কিছু পায়। হয়তো আমিও পাবো।’
মুমিনুলের চাওয়াটা বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদেরও। টেস্ট ক্রিকেটে সুদিন দেখতে চান তারা। দিনের পর দিন ভালোর আশ্বাস শুনতে শুনতে এখন ক্লান্ত সবাই।