বিএনপির মহাসমাবেশ

মাঠে থাকবে র‍্যাব-পুলিশের ২০ হাজার সদস্য

বকুল আহমেদ :

  • মহাসমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে পুলিশ
  • ঢাকাজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
  • প্রবেশপথেও থাকবে সতর্ক প্রহরা

 

ঢাকায় আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেদিন র‍্যাব-পুলিশের ১৫ থেকে ২০ হাজার সদস্য মাঠে থাকবেন। এ ছাড়া প্রস্তুত থাকবে আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) ও জলকামানসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসামগ্রী। সমাবেশ ঘিরে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে রাজনৈতিক বড় সমাবেশ সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা পুলিশের রয়েছে। এবারও সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন তারা। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক বড় কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ থেকে ২০ হাজার সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। এবারও সমসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে সমকালকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি। রাজনৈতিক তৎপরতার দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিএমপির ৫০ থানার ওসিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ গুজব ছড়িয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি আবাসিক হোটেলে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ।

ডিএমপি সূত্র জানায়, মহাসমাবেশের দিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পাশাপাশি ঢাকার প্রবেশপথ আবদুল্লাহপুর, গাবতলী, পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কেউ যাতে বিস্ফোরক দ্রব্য কিংবা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পেরে, সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ গত ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে জনসমাবেশ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই মহাসমাবেশ থেকে এক দফা আদায়ের মহাযাত্রা শুরুর কথা বলেছেন তিনি। ওই মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথাও জানিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি সমাবেশ করতে চায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। এই স্থানে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত শনিবার ডিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সেখানে অনুমতি দেওয়া হবে নাকি অন্য কোনো স্থানে– সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ডিএমপি। একই দিন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। প্রধান দু’দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন।

ডিএমপি সূত্র জানায়, বিএনপিকে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেবে পুলিশ। তবে রাজধানীর কোন জায়গায় অনুমতি দেওয়া হবে তা ঠিক হয়নি। বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে ডিএমপি সদরদপ্তরে একটি সভা হয়েছে। তাতে বিএনপিকে বিকল্প কোনো জায়গায় অনুমতি দেওয়ার কথা আলোচনা হয়। নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের অনুমতি নাও দেওয়া হতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করার কথা বলা হতে পারে। নয়াপল্টনে সমাবেশ হলে তীব্র যানজট সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে বিকল্প ওই দুই স্থানের একটি বিএনপিকে বেছে নিতে বলা হতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান ও সরকারি স্থাপনা রক্ষা করতে পুলিশ বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে পুলিশের যে দায়িত্ব রয়েছে, তা সুচারুভাবে পালন করা হবে। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশ দেবেন, আমরা সেই আলোকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেব।

রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ আমিনবাজার, বাবুবাজার ব্রিজ, তুরাগ, বছিলা। এই প্রবেশমুখগুলো ঢাকা জেলা পুলিশের আওতাধীন। এসব প্রবেশপথে ২৮ অক্টোবর ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। সমকালকে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ও জানমালের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশের। তবে মহাসমাবেশ হলে বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়।