মাথাপিছু ১০ হাজার টাকায় ৫৭ রোহিঙ্গাকে সাগরে ভাসায় দালাল চক্র

বিশেষ প্রতিবেদক •

সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাচারের সময় বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার ৫৭ রোহিঙ্গার প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে পাচার চক্র হাতিয়ে নিয়েছে। গন্তব্যে পৌঁছার আগে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু পরিশোধ করতে হতো আরও ৪০-৪৫ হাজার টাকা। এসব তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাব কর্মকর্তারা।

পাচারের সময় আজ শুক্রবার ভোরে বঙ্গোপসাগর থেকে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটকের পাশাপাশি ৫৭ রোহিঙ্গা ও এক বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে র‍্যাবের একটি দল। পরে দুপুরে কক্সবাজারে র‌্যাব-১৫–এর কার্যালয়ে উদ্ধার ব্যক্তিদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম সরকার।

খাইরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরের টেকনাফের শামলাপুর উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য ৫৭ জন রোহিঙ্গা ও একজন বাংলাদেশি টেকনাফের বাসিন্দাকে একটি মাছ ধরার ট্রলারে তোলা হয়। সবাইকে ওই ট্রলারের ডেকের নিচে বিশেষ কায়দায় জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। মালয়েশিয়ায় পৌঁছে ভালো বেতনে চাকরি এবং উপযুক্ত পাত্র–পাত্রীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সমুদ্রপথে যেতে রাজি করানো হয়। মাথাপিছু ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধের মৌখিক চুক্তি করা হয়। ট্রলারে ওঠানোর আগে দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। বাকি ৪০-৪৫ হাজার টাকা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানকারী দালাল চক্রের ট্রলারে ওঠার পর পরিশোধের কথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু ওই জাহাজে ওঠার আগেই রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, সমুদ্রপথে কিছু লোককে মালয়েশিয়া পাচারের খবরটি আগেভাগে জানা ছিল র‍্যাবের। পরে র‍্যাবের একটি দল সাগরে নামে। একপর্যায়ে গভীর সাগরে একটি ট্রলার থেকে ৫৭ জন রোহিঙ্গা ও একজন টেকনাফের বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুই বাংলাদেশি মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাগমারা গ্রামের মো. সোহেল (৩২) ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশিখালী ইউনিয়নের ছামিরাপাড়ার মুছা কলিমুল্লাহ (৪২)। বিকেলে দুই মানব পাচারকারীকে টেকনাফ মডেল থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মামলা হয়েছে।

উদ্ধার কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সাংবাদিকদের বলেন, ২২ মার্চ সকালে একাধিক দলে বিভক্ত করে তাঁদের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাইরে আনা হয়। এরপর দালাল চক্র ছোট যানবাহনে চার-পাঁচজন করে তুলে নিয়ে যায় টেকনাফের হাফিজাপাড়ার পাহাড়ি আস্তানায়। বৃহস্পতিবার রাতে সেই আস্তানা থেকে বঙ্গোপসাগরে অপেক্ষমাণ একটি মাছ ধরার ট্রলারে তোলা হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর গভীর সাগরে অবস্থানরত আরেকটি বড় জাহাজে নিয়ে যাওয়ার সময় রোহিঙ্গা–বোঝাই ট্রলারটি র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে।

উদ্ধার ৫৭ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ২৪ জন নারী, ১১ শিশু ও ২২ জন পুরুষ। সবাই উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরের শরণার্থী। উদ্ধার বাংলাদেশি টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা।

পুলিশ জানায়, ২১ মার্চ দুপুরে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের সৈকত থেকে পুলিশ দুই দফায় উদ্ধার করে ১৪৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে। তাঁদেরও মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবির থেকে বের করে দালাল চক্র ট্রলারযোগে সোনাদিয়া দ্বীপে এনে জড়ো করেছিল পাচারকারীরা। কিন্তু পাচারের আগে পুলিশ রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে। পরে ১৪৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তর করা হয় নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭৮ জন নারী, ২৩ শিশু ও ৪৮ জন পুরুষ ছিল।