মাথা নিচু করে আত্মসমর্পণ বনাম মাথা উঁচু করে আত্মসমর্পণ: পার্থক্য আছে নিশ্চয়ই?

মহসিন উল হাকিম :

জয়মনির বনদস্যু বশির। জুলফু বাহিনীতে দস্যুতা শুরু। পরে শান্ত বাহিনীর সঙ্গে আত্মসমর্পন করেন। সবার মতোই অস্ত্র জমা দিয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। এরপর জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরেন বশির। তারপর প্রতি শুক্রবার মসজিদে মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদের মাইকে মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। জনে জনে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন। বশির এখন অতীতের অপরাধ স্বীকার করে মাথা নিচু করেই বসবাস করছেন মংলার জয়মনিরঘোলে।

সুন্দরবনের ভয়ঙ্কর দস্যুরা যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দেয়, তখন হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছে। ৩২৮ জন সশস্ত্র বনদস্যু-জলদস্যু ৪৭০টি অস্ত্র জমা দিয়েছে। আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানগুলোতে মাথা নিচু করে ঢুকেছে। অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে। আবার মাথা নিচু করে জেলখানায় গেছে।

জামিন নিয়ে যখন বাড়ি ফিরে তারা, তখনও জনে জনে ক্ষমা চায় তারা। প্রতিবেশীদের সামনে মাথা নিচু করেই চলাফেরা করে তারা। অপরাধী জীবনের সমাপ্তি টেনে আইনী পথে বাকী জীবন কাটাবে, সেটিই তাদের প্রাপ্তি। এর বেশী কিছু নয়।

এবার আসি কক্সবাজারের টেকনাফে অনুষ্ঠিত ইয়াবা চোরাকারবারীদের অাত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে। সেদিন ইয়াবা চোরাকারবারীদের স্টেজে উঠে বুক ফুৃলিয়ে চলার দৃশ্য মনে হয় সবাই দেখেছে। এতো বড় ঘৃন্য অপরাধ করার পর আত্মসমর্পনের সুযোগ পাওয়াটা তাদের সাত জনমের ভাগ্য। কিন্তু আত্মসমর্পনের দিন তাদের আচরণ সত্যিই ভাবিয়েছে আমাকে। অনেককেই ভাবিয়েছে। এনিয়ে সমালোচনাও হয়েছে, সংবাদ হয়েছে। অনুষ্ঠান চলাকালে সাংবাদিকদের হুমকিও দিয়েছে কোনো কোনো চোরাকারবারী। প্রথম আলোতে সেই সংবাদ পড়েছি ১৭ ফেব্রুয়ারি।

একজন ঘৃণ্য ইয়াবা চোরাচালানকারী সবার সামনে সাংবাদিককে হুমকি দিবে, সেই প্রশ্রয় নিশ্চয়ই তাদের কেউ দিয়েছে!!! পুলিশ হেফাজতে বসে ফেসবুকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে স্ট্যাটাস দেওয়াও দেখেছি আমরা।

গত বছরের মে মাস থেকে ইয়াবা চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন সংশ্লিষ্টরা। তার আগে কোথায় ছিলেন তাঁরা? সারাদেশে বন্দুকযুদ্ধের খবর পেলেও ইয়াবা চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে এমন অ্যাকশন কেন নেওয়া হয়নি আগে? প্রধানমন্ত্রী না বললে বুঝি তাদের প্রতি কঠোর হওয়া যায় না? প্রসঙ্গটি তুললাম ইয়াবা কারবারীদের দাপট বুঝানোর জন্য। তারা নিজেরা কামাই করেছে, কাদের কাদের ভাগ দিয়েছে সে অনেকেরই জানা। ইয়াবার টাকায় শুধু টেকনাফে কয়েকটি বিল্ডিং ওঠেনি। ক্ষমতা আছে যাদের হাতে, তাদের পেছনেও খরচ হয়েছে ইয়াবার কামাই এর একটি অংশ। তারা প্রশাসনের লোকজন হতে পারেন, জনপ্রতিনিধি হতে পারেন, হতে পারেন সাংবাদিক।

আমি শুধু বলতে চাই, আত্মসমর্পনের দিনে এই চোরাকারবারীদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। অনেক প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

এমনিতেই নতুন কাঠের হাতলের সামনে জং ধরা লোহাগুলো পুরো বিষয়টিকে হাস্যকর জায়গায় নিয়ে গেছে। তার পরও এই উদ্যোগের সাফল্য কামনা করছি। কারণ, এটি সফল না হলে বুমেরাং হয়ে আমাদেরই তা আঘাত করবে। সংশ্লিষ্টরা যে তার দায় যে নিবেন না সেবিষয়ে নিশ্চিত আমি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আত্মসমর্পন করা মাদক চোরাকারবারীরা অনেক নতুন তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে নতুন অভিযানের খবর শুনতে চাই। নতুন নতুন নাম তালিকায় দেখতে চাই। আর সেই পুরনো প্রশ্নেরও উত্তর জানতে চাই, ১০২ জনের কে কয়টি ইয়াবা জমা দিয়েছে? অস্ত্রগুলো কে কে জমা দিয়েছে? অস্ত্রগুলোর উৎস কী?

মহসিন উল হাকিমের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া…..