মাদক মামলা হ্রাসে নানা পদক্ষেপ: ৪ মাসে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জামানত আদায়

এম. বেদারুল আলম •

কক্সবাজারে মাদক মামলার ভারে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট আদালতসমুহ। মাদক মামলা বিশেষ করে ইয়াবা মামলার কারণে অন্যান্য মামলার গতি শ্লথ হয়ে যাচ্ছে।

মামলা নিস্পত্তি দীর্ঘসূত্রিতা, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক থেকে আসামিদের অনিয়মিত হওয়া, অপরাপর মামলার উপর বেশি পরিমানে চাপ কমাতে এবং দ্রুত সময়ের মধ‍্যে মাদক মামলা শেষ করতে অবশেষে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইমসাইল। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বাস্তবায়নও। তিনি কক্সবাজারের সকল আদালতে এ পদক্ষেপ চালু করবেন বলে জানিয়েছেন।

কক্সবাজাররের সুফল চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জ্ঞাত হওয়ার পর সেখানেও চালুর ব্যবস্থা করতে আদেশটি চেয়েছেন বলে জানান জেলার প্রধান বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের নাজির বেদারুল আলম জানান, মাদক মামলা নিয়ে অপরাপর মামলা অনেকটা গতিহীন এবং জট লেগেই থাকে। আবার অনেক সময় মাদক মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসে পলাতক হয়ে যায়। পলাতক প্রবণতা রুখতে এবং মাদক বিশেষ করে ইয়াবার মামলায় যাতে আসামিরা পলাতক না থাকে তার জন্য কক্সবাজার সিনিয়র দায়রা ও জজ মোহাম্মদ ইসমাইল কয়েকটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন এবং বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সুফল ও পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্র। পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হলো জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের জামিনের শর্ত হিসাবে আর্থিক জামানতের বিধান। জামিন পাওয়ার পর পলাতক হলে জামানতের টাকা জমা হবে রাষ্ট্রেয় কোষাগারে। যদি মামলার বিচার শেষে খালাসপ্রাপ্ত হলে জামানতের টাকা খালাসপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত প্রদান করা হবে।

জেলা নাজির সুত্রে জানা যায়, মাদক মামলায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এবং অপর ৩ আদালতের বিচারক ৪ মাসে মাদক মামলার আসামিদের কাথ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জামানত আদায় করে রাষ্ট্রিয় কোষাগারে জমা করেছেন।

এরমধ্যে গত ৮ মার্চ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত জেলাও দায়রা জজ আদালত মোহাম্মদ ইসমাইলের আাদালতে ২ কোটি ৯১ লাখ, ৯৪ হাজার টাকা, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে ২১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আলমগীর ফারুকীর আদালতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদুল হাসানের আদালতে ২০ হাজার টাকা আর্থিক জামানত গ্রহন করা হয়েছে।

জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, কক্সবাজারে যেহেতু মাদক মামলা বিশেষ করে ইয়াবার মামলার চাপ বেশি। অনেক আসামি উচ্চ আদালতে জামিন নিয়ে পলাতক হয়ে যায়। ফলে তাদের জামানত গ্রহন করলে মামলায় নিয়মিত হবে। পাশাপাশি দ্রুত নিস্পত্তি হতে সহজ হবে। যদি পলাতক থাকে রাষ্ট্র পাবে আসামিদের কাজ থেকে নেয়া জামানতের অর্থ। আসামি যদি খালাসপ্রাপ্ত হয় তাহলে গৃহিত অর্থ যথা সময়ে আইনী প্রক্রিয়ায় ফেরত পাবে।

জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের নেয়া এ পদক্ষেপ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ ফরিদুল আলম বলেন- নিঃসন্দেহে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মাদক মামলা বিশেষ করে ইয়াবার মামলার কারণে কক্সবাজারে অনেক মামলার গতিহীন এবং দীর্ঘসময়ক্ষেপন হচ্ছে। জামানত প্রথাটি চালুর ফলে আসামিরা যেমন দায়বদ্ধতার মধ্যে থাকবে জামানতের টাকার জন্য পাশাপাশি মামলা নিস্পত্তি ও দ্রুত হবে।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী বলেন- জামানতের এ বিধানটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে অনেক আগে থেকে। আমাদের দেশে এটি চালু হয় ১৯৮৪ সালে। তবে কার্যকর ছিলনা এতদিন। জেলা জজ মহোদয় কক্সবাজারে এটি চালু করা মানে যথাযত জায়গায় যথাসময়ে পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন।

এর ফলে কক্সবাজারের মাদক কারবারি ও সংশ্লিষ্টদের জন্য বড় শিক্ষা হবে। মাদকের ডেরা কক্সবাজারে অন্তত মাদক মামলা হ্রাত পাবে অনেকাংশে।