মানুষ, মানুষ থাকুক


আনম রফিকুর রশীদ


আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। শ্রেষ্ঠ এজাতীর একটাই অভিন্ন জাত; ভিন্ন কোনো জাত উপজাত নেই। সর্বজনীন মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণই মানবাত্মা। মানবাত্মা সম্পন্ন জীবই মানুষ।

ধর্ম-দর্শন , সংগীত-কলা, রাজনীতি-সমাজ সবাইকে মানুষ হতে শিক্ষা দেয়। এশিক্ষা অর্জনে যারা ব্যর্থ তারা কি পরিপূর্ণ মানুষ? এর সর্বজন গ্রহণীয় উত্তর দুর্লভ।

পৃথিবী অনেক মানব মহামানবের জীবনালোকে উজ্জ্বল। বর্তমান ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনজন মানুষের কথা স্মরণ করছি পরম শ্রদ্ধায়।

লালন শাহ– কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ। গুটিবসন্তে আক্রান্ত শিশু লালিতপালিত হয় দরিদ্র পালকির বেয়ারারের কুঁড়েঘরে। পড়ালেখা বঞ্চিত মানুষটি কঠোর সাধানায় নিজকে প্রতিষ্ঠিত করে মানুষ হিসাবে। সব ধর্ম, বর্ণ, জাত ও দেশের কথা লালনের একতারায় বাজে। মানুষ ভেদাভেদ ভুলে লালনের একমরমিসুরে মজে।

মহাত্মা গান্ধী — অহিংস রাজনীতির প্রবর্তক। সর্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব। কোটপেন্ট ছুড়েফেলে পরিধান করেন নিজহাতে বুনা ধুতি। বুকে টেনে নেন, সব শ্রেণির মানুষ। ব্যারিস্টার, রাজনৈতিক, ভারতীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানুষ হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেন।

শহিদ আল বোখরি মহাজাতক — আধ্যাত্মিক সাধক। তিলোত্তমা ঢাকার নাগরিক কোলাহল ছেড়ে আস্তানা গড়ে বান্দরবানের গহিন অরণ্যে। অভিন্ন এক বেষ্টনির ভেতর প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসালয়, ব্যায়ামাগার, মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়। গরীব, ধনি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি সবার সমান সুযোগসুবিধা ও সহবস্থানের আন্তরিক পরিবেশ। মুসলমান, সনাতনি, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সবধর্মের ধার্মীক লোকজন মহান সৃষ্টিকর্তার ধ্যানে আত্মমগ্ন এখানকার আরোগ্যশালায়। সবার কাছে তিনি মহান আল্লাহপাকের বিশেষ অনুগ্রাহী মানুষ হিসাবে পরিচিত।

মানুষ এখন হারিয়ে ফেলেছে আপন স্বকীয়তা। মানুষ নামে নয়, বাঙালিঅবাঙালি, লীগদল, আস্তিকনাস্তিক, ধর্মবর্ণ ইত্যাদি নামে পরিচিত। সৃষ্টি করছে সুরের পরিবর্তে অসুর, চর্চা করছে অহিংস রাজনীতির পরিবর্তে সহিংসতা, সহনশীল ধর্ম পালনের পরিবর্তে অসহনশীলতা।

মানুষ কেনো মানুষ থাকতে চায় না! মানুষ, মানুষ থাকুক। সৃষ্টির সেরা জীব– এ খেতাব অক্ষুণ্ণ থাকুক।

লেখক- আনম রফিকুর রশীদ