উখিয়ার মান আরো উঁচুতে নিয়ে যেতে চান আজফার: জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন তার!

মামুন হোসাইন •


কক্সবাজারকে বলা হয় ফুটবলারদের চারণভূমি। ফুটবলে এই জেলার অতীত ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ; তেমনি বর্তমানও। অনেক নামকরা ফুটবলারের জন্ম এখানে। তবে কক্সবাজারের ৯টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র উখিয়াতেই তেমন কেউ সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি।

এর বাইরে সদর, চকোরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু কিংবা হালের ঈদগাঁও উপজেলারও অনেক ফুটবলার ইতোমধ্যে ঢাকার ফুটবলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, করে যাচ্ছেন নিয়মিতই। উখিয়াতে সবেধন নীলমণি নারী ফুটবলার সাহেদা আক্তার রিপা। কদিন আগে যিনি সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে শিরোপা এনে দিয়েছেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারের পাশাপাশি জিতে নিয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও।

অবশ্য এতদিন উখিয়ার ফুটবলের ঝাণ্ডা রিপার হাতে থাকলেও, সেখানে আরো এক ফুটবলার ভাগ বসিয়েছেন। তিনি নারী ফুটবলার নন; পুরুষ ফুটবলার। আজফার আকিব চৌধুরী তার নাম। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ফুটবলে এবার ওয়ারী ক্লাবের হয়ে খেলছেন। রিপার বাসা থেকে আজফারের বাড়ির দূরত্ব মাত্র মিনিট পাঁচেকের। উখিয়ার সোনাইছড়ির মেয়ে সাহেদা আক্তার রিপা; আর রত্নাপালংয়ের গর্ব আজফার আকিব চৌধুরী। ঢাকার ফুটবলে খুব বেশিদিন হয়নি খেলছেন আজফার। সব মিলে মাত্র ৬-৭ বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ার এ সেন্টার মিডফিল্ডারের। স্বল্প সময়ে দুটি চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলা হয়ে গেছে; এবার তৃতীয়টিতে খেলছেন। তার আগে তৃতীয় বিভাগে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে আরামবাগের হয়ে খেলেছেন।

আজফারের ফুটবলে হাতেখড়ি নিজ জেলা কক্সবাজারের উখিয়াতে। সেখানেই তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। জেলা দলের কোচ মাসুদের হাত ধরে ফুটবলে যাত্রা শুরু। তবে ফুটবলে আজ তিনি যে পর্যায়ে এসেছেন, যতটুকু নিজেকে তৈরি কিংবা সমৃদ্ধ করেছেন তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আপন বড় ভাই আজফার সাবিদ চৌধুরীর। ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, ভালোলাগা তার। ২০১৩ সালে এয়ারটেল রাইজিংস্টার ট্রায়াল দিয়ে মূলত ফুটবল অঙ্গনে পা রাখা। এরপর সেখান থেকে ঢাকায় এলেও ট্রায়াল থেকে বাদ পড়ে যান। এতে অবশ্য দমে যাননি।

চট্টগ্রামে লিগে নিজের ফুটবলীয় মেধার স্বাক্ষর রাখেন আজফার। নিজেকে তৈরি করে চলে আসেন ঢাকাতে। এরপর ২০১৬ সালে তৃতীয় বিভাগ ফুটবল খেলে, ২০১৮-১৯ মৌসুসে নাম লেখান বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ক্লাব ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্সে। সেখান থেকে গত মৌসুমে ফরাশগঞ্জে যোগ দেন। মাঝে করোনার থাবায় একটা মৌসুম কাটা পড়ে। ফরাশগঞ্জে থাকাকালীন দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেন। অনেকের নজর পরে আজফারের ওপর। বিশেষ করে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিদুর রহমান মিরাজের। মিরাজই মূলত চলতি মৌসুমে ফরাশগঞ্জ থেকে ওয়ারীতে নিয়ে আসেন।

দেশসেরা তৃণমূল ফুটবল কোচ কামাল বাবুর অধীনে ইতোমধ্যে ওয়ারীতে প্রথম লেগ শেষ করে দ্বিতীয় লেগে মাঠে নেমেছেন আজফার। দলের হয়ে প্রথম লেগে ৫-৬টি ম্যাচ খেলেছেন। বাকি ম্যাচগুলোতে দলে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। ওয়ারীতে যতটুকু খেলার সুযোগ পাচ্ছেন নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছেন দলকে ভালো কিছু উপহার দেয়ার। কোচ কামাল বাবুর ভূঁয়সী প্রশংসা আজফারের কণ্ঠে। ওয়ারীতে এসে নাকি কামাল বাবুর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। টিম ম্যানেজমেন্টেরও প্রশংসা ঝরেছে এই তরুণ সেন্টার মিডফিল্ডারের কণ্ঠে।

পরিবারের সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়ে ফুটবলে পা বাড়িয়েছেন আজফার। ব্যবসায়ী বাবা, গৃহিনী মায়ের তিন ছেলের সবার ছোট আজফার। ছোট এক বোনও রয়েছে তার পরিবারে। সকলের ভীষণ আদরের, ভালোবাসার মানুষ আজফার। ফুটবল নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার ছোট্ট মনে। একদিন অনেক বড়মাপের ফুটবলার হবেন, জাতীয় দলে খেলবেন। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়াবেন- এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঢাকার মাঠে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন উখিয়ার গর্ব, বাংলার ফুটবলের তরুণ মুখ আজফার আকিব চৌধুরী।