মা-মেয়েসহ তিন নারী সদস্যকে নির্যাতন: তদন্ত টিমের ঘটনাস্থল পরিদর্শন

এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া ◑কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশি দিয়ে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেনের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত টিম সোমবার দুপুরে আলোচিত ঘটনার ঘটনাস্থল হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁন্দা এলাকা পরিদর্শণ করেছেন।

তদন্ত টিমের প্রধান কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব পদ মর্যদার) শ্রাবস্তী রায়ের নেতৃত্ব তিন সদস্যের তদন্ত টিম সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ সময় তদন্ত টিমের অন্যদুই সদস্য চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) তানভীর হোসেন ও হারবাং ইউনিয়নের একজন ট্যাগ অফিসার উপস্থিত ছিলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে তারা স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বললেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের সাথে তেমন কোন কথা বলতে রাজি হননি কমিটির প্রধান কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তবে তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) তানভীর হোসেন বলেন, আলোচিত এ ঘটনার সময় উপস্থিত স্থাণীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার} ও চৌকিদারদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য নেওয়া হয়। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে আর কিছু বলা যাচ্ছেনা বলেও জানান তিনি।

এছাড়া হারবাং ইউনিয়নে সংগঠিত এ আলোচিত ঘটনা নিয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজের নেতৃত্বে গঠিত আরেকটি তদন্ত কমিটি মাঠে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। গত রবিবার বিকালে ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বললেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে আলোচিত গরু চুরির ঘটনায় গরুর মালিক ও হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাষ্টার মাহমুদুল হক গত শুক্রবার রাতে বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পরের দিন শনিবার সকালে আসামীদের আদালতে হাজির করা হয়। শনিবার বন্ধের দিন থাকায় মামলার প্রেক্ষিতে আদালত আসামীদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। তবে সোমবার দুপুরে এ মামলার পঁাচ আসামীর মধ্যে নির্যাতনের শিকার মা-মেয়েসহ একই পরিবারের তিন সদস্যকে জামিন দিয়েছেন চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রাজিব কুমার দেব। সোমবার সকালে আসামীদের পক্ষে আদালতের সিনিয়র আইজীবি এ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আরিফের নেতৃত্বে একদল আইনজীবি জামিনের আবেদন করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক কারান্তরীণ এসব নারী আসামীদের জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। জামিন প্রাপ্তরা হলেন, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার, তার মেয়ে সেলিনা আক্তার ও রোজিনা আক্তার। তবে এই মামলার অপর দুই পারভীন আক্তারের ছেলে মো. আরমান ও পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউপির মোহাম্মদ চুট্টুর জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত।

অপর দিকে গরু চুরির অভিযোগে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চুরি হওয়া গরুর মালিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাস্টার মাহাবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (২০) ইমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৮) ও জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (৩০)।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, গরু চুরির অভিযোগে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালানোর ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই তিনজনকে আটক করা হয়। রবিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে হারবাং পুলিশ ফঁাড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেন।

প্রসঙ্গত: গত শুক্রবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও কতিপয় উৎসোক জনতার বিরুদ্ধে।

শনিবার দিবাগত রাতে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা-মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব পদ মর্যদার) শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে এ তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।