মৃত্যুপুরী স্পেনে করোনা ছড়িয়েছে কে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ◑ প্রতিদিন শুধু লাশেরই হিসাব; হিসাব থাকছে আক্রান্তদেরও। রেকর্ড গড়ে নিজেরাই সে রেকর্ড ভাঙছে; আবার নতুন করে গড়ছে রেকর্ড। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এখন এক মৃত্যুপুরীর নাম স্পেন। দেশজুড়ে থামছে না ভাইরাসের ভয়াল থাবা। থামবারও কোনও লক্ষণও কী আছে? এখনও পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না কিছুই। কোথায় গিয়ে থামবে এই প্রাণণাশের হিসাব কেউ জানে না।

জানা যাচ্ছে না অনেককিছুই। তবে যেটুকু জানা যাচ্ছে- তা অনেকটা সরল গল্পের মতো। স্পেনে কে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস? এখনও পর্যন্ত এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে আরেক মৃত্যুপুরী ইতালিতে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একটি ম্যাচকেই। এরপর…!

সিএনএন বলছে, অসময়ের কিছুটা উষ্ণ আবহাওয়া, চ্যাম্পিয়ন লিগ, কিছু অনুষ্ঠান, সমুদ্র সৈকত আর ক্যাফে সংস্কৃতি- এসবের মাধ্যমেই সর্বনাশ ঘটেছে স্পেনে।
করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে; আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। ইউরোপ চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের দলের খেলা দেখতে স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার ৩ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন ইতালির মিলানে। ওই ম্যাচটি দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন ইতালির আরও ৪০ হাজার মানুষ।

ইতালির মিলানের বারগামোর মেয়র জিয়োর্গিও গোরি বলেন, ওই সন্ধ্যায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। স্টেডিয়ামের বাইরেও এর প্রভাব পড়ে। মানুষ বাড়িতে খেলা দেখে, ভিড় জমায় দলে দলে বার সহ বিভিন্ন স্থানে। তিনি বলেন, এটা এখন স্পষ্ট, ওইদিন সন্ধ্যাতেই করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

ইতালিয়ান রোগপ্রতিরোধ বিজ্ঞানী (ইমিউনোলোজিস্ট) ফ্রান্সেসকো লে ফসেরও একই মত। তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচকে এর জন্য দায়ী করে বলেন,
চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তার মাঠে নেমেছিল স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া। ম্যাচটা সেদিন ৪-১ গোলে জেতে আতালান্তা।

ওই ম্যাচের দুইদিন পর বারগামো থেকে ৪০ মাইল দূরে কডোনগো শহরে ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এই সময়ের মধ্যে আরও বিভিন্ন স্থানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে ইতালির ২০জন বিশেষজ্ঞের ধারণা।

ম্যাচ দেখা শেষে ইতালি থেকে যখন স্পেনে ফেরেন দর্শকরা; তখন সঙ্গে করে করোনা নিয়ে ফেরেন তারা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ক্রীড়া সাংবাদিক কাইক মেটু্ওর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ফেরার চারদিনের মাথায় সর্দি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আমার। এরপর আমি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ ইতালির লোম্বার্দিতে তখন ব্যাপকহারে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

এরপর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইতালি থেকে ফেরা ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ার খবর ছড়াতে থাকে স্পেনে; পর্তুগালেও একই ধরনের অবস্থা দেখা যায়। তবে তখনও ব্যাপারটা নিয়ে এত গুরুত্ব দেয়নি স্পেন কর্তৃপক্ষ। মার্চের শুরুতেও এর প্রভাব চোখে পড়েনি জনজীবনে।

খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে সবকিছু। মানুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে থাকে; খোলা থাকে বার-রেস্টুরেন্টসহ সবই। ৮মার্চ বিশ্ব নারী দিবসও পালন করা হয় বেশ জমকালো আয়োজনে।

এমন পরিস্থিতিতে চলতে চলতে শুরু হয়ে যায় স্পেনে লাশ গণনার দিন। এক পর্যায়ে অবশ্য সবই বন্ধ হয়; লকডাউনে যায় দেশ। তবে ততক্ষণে দেরি হয়ে যায় অনেক। প্রতিদিনই বাড়তে থাকে লাশের সংখ্যা। মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে স্পেন।

এক চ্যাম্পিয়ন লিগ থেকে ছড়ানো ভাইরাসে প্রাণ নেওয়ার যে ভয়ানক উৎসব শুরু হয়েছে, লাশ গুনতে হচ্ছে প্রতিদিনই; এই গণনা কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে!