যেভাবে চকবাজার হলো মৃত্যুপুরী

ডেস্ক রিপোর্ট – রাত ১০টা বেজে ৩৩ মিনিট। চকবাজার চুড়িহাট্টা ৫ রাস্তার মোড়। চারিদিকের গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশা, পিকআপ ভ্যানে তখনো জ্যাম। অন্য দিনগুলোতে এমন সময় রাস্তা ফাঁকা থাকলেও ঘটনার সময় ছিল ভিন্ন চিত্র, জ্যাম লেগেছিল মোড়টিতে।

এতো রাতে জ্যাম! কিছুক্ষণ বাদে একুশের প্রথম প্রহর। তাই ফুল দিতে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো এলাকার মানুষের মধ্যেও ছিল ব্যস্ততা।

ঠিক তখনই ঘটে গেল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনের সূত্রপাত রাস্তা থেকে ঘটে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ আর বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সূত্রপাত হয় আগুনের, মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। আগুনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে অনেকেই দোকানের শাটার টেনে ভেতরে অবস্থান নেন। কিন্তু, ভয়াবহ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হন অনেকে। দম বন্ধ হয়েও প্রাণ যায় শাটার বন্ধ করে দোকানের ভেতরে আশ্রয় নেয়া লোকদের।

চুড়িহাট্টা ৫ রাস্তার পাশে এক দোকানী নুর বাশার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমার দোকানটা মোড় থেকে একটু সামনে। হঠাৎ শব্দ শুনেই আমি মোড়ের দিকে ছুটে আসি। এসে দেখি পিকআপটাতে আগুন জ্বলছে।

পরে পিকআপের আগুন থেকে পাশে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হয়। পাশে একটি প্রাইভেট কার ছিল, সেটাতে আগুন লাগে। যেহেতু রাস্তায় জ্যাম ছিল, সেখান অনেকে দৌড়ে বের হয়ে যায়। আবার অনেকে রিকশা বা গাড়িতেই থেকে যায়।

৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই হোটেলে থাকা সিলিন্ডার আর গাড়ির সিলিন্ডার মুহূর্তেই বিস্ফোরিত হয়। আগুনে দিশেহারা হয়ে রাস্তার আগুন থেকে বাঁচতে অনেকে দোকানগুলোতে আশ্রয় নেন।

কিন্তু, সময়ের ব্যবধানে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দোকান বা হোটেলগুলো আগুনের উত্তাপ শুরু হয়ে যায়। ফলে যারা ভিতরে ছিল, সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চুড়িহাট্টা মোড়ে আগুনে পুড়ে মোটরবাইক, প্রাইভেটকার, রিকশা সবকিছু পুড়ে শুধু লোহারে ভাঙ্গাড়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বডি স্প্রের শত শত হাজার বোতল পড়ে রয়েছে রাস্তায়।

আগুনে পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে দুইটা প্রাইভেটকার, দুইটা পিকআপ, ৫-৬ মোটরসাইকেল, একাধিক রিকশা ও মাল বহনের লরি পড়ে আছে।

রাস্তার পাশে ওয়াহিদ ম্যানশনের চারতলা বিশিষ্ট ভবন ছিল। ভবনের নিচ তলায় ছিল প্লাস্টিক দোকান, মোবাইলের দোকান ও ডেকোরেটরের দোকান। আর দুই তলায় ছিল বোডি স্প্রের দোকান। বাকি উপরের দুই তলা ছিল বাসা বাড়ি।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানালেন, ভবনটি পুরাটা পুড়ে গেছে। ভেতর থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর ভবনটা পুড়ে যাওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে,  যেকোনো সময় ঘটতে পারে নতুন আরেক দুর্ঘটনা।

তার ঠিক পাশে রাজমহল হোটেল। সেখানে রাজধানীতে গ্যাসের সমস্যা থাকায় হোটেলে সিলিন্ডার ব্যবহার করছিল। ফলে আগুনের সূত্রপাত ঘটলে মুহূর্তে সেখানে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি।

রাজমহল হোটেলের বিপরীত পাশে আনাস হোটেল ছিল, সেখানেও সিলিন্ডারের ব্যবহার করছিল। যার ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে হোটেলটিতে। হোটেলের পাশে ফাহিম রহমান নামের এক ব্যক্তির চার তলা বিল্ডিং। সেই বিল্ডিংয়ের নিচতলায় দোকানগুলোর মধ্যে ছিল হায়দার ফার্মেসি। তার পাশে টেইলার্সের দোকান, তারপাশে রঙের দোকান।

নিচের দোকানগুলো প্রত্যেকটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সেই দোকানগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা হায়দার আলী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, হায়দার ফার্মেসিতে চারজন বসেছিল। পরে রাস্তায় আগুন দেখে বাঁচতে দোকানের শাটার টেনে দেয়। আগুন বাড়লে আর দোকান থেকে বের হতে পারেনি। সকালে ভিতর থেকে চারজনের লাশ বের করেছে। একইভাবে পাশের টেইলার্সের দোকানেও মানুষ মারা যায়।

আর মোড়ের ঠিক অন্যপাশে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদ থাকলেও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

চকবাজারের স্থানীয় এক শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমি ৫ রাস্তার মোড়ে ছিল। ঠিক ৩০ সেকেন্ড আগে জ্যাম ঠেলে একটু সামনে আসি। আসার পরপরই বিকট শব্দ হয়ে আগুনের গুল্লির মতো উপরে উঠতে থাকে। উপরে উঠেই ভবনে আগুন লেগে যায়, পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়, শুধু ওখানে বিকট শব্দ আর দাউ দাউ আগুন করে জ্বলতে থাকে।