রাজনৈতিক-সামাজিক অবক্ষয় থেকে সংঘর্ষ

সাইদুর রহমান, ইত্তেফাক :

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একের পর এক রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বিতীয় ও তৃতীয়ধাপের ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, উত্তপ্ত-উত্তেজনা ততোই ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যে ইউপি নির্বাচনে ২২জনের প্রাণহানি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার মাঠ কর্মকর্তা এবং বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করবে উদ্বিগ্ন ইসি। সহিংসতার কারণ হিসাবে স্বয়ং নির্বাচন কমিশন মনে করছে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় থেকে এসব ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তবে এই সহিংসতার জন্য প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অসহনশীল মানসিকতায় অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করছেন তারা।

দ্বিতীয়বারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এবারের ইউপি ভোটে বিশেষ করে প্রার্থীদের আচরণ অস্বাভাবিক বলছেন ইসির সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নির্বাচনী প্রার্থী হয়ে সবাই জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যান। ‘ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেলে জয় নিশ্চিত ’এই মানসিকতায় নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রশাসনের সমর্থন থাকাও অনাকাঙ্খিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শাহদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রাণহানি কোনভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণে সহিংসতা হচ্ছে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং প্রার্থীর সমর্থকদের সহনশীল হতে হবে। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সংযত হলে সহিংসতা কমে আসবে। সহিংসতা কমানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বৈঠকে বসবে কমিশন। নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সভাকক্ষে ভার্চুয়ালি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে আগামী বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। এই দু’টি বৈঠক থেকে ইউপি নির্বাচনে কেন হঠাত্ সহিংসতা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে তার কৈফিয়ত চাইবে কমিশন। প্রতিরোধের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে। সহিংসতার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন শিথিলতা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। আজকের মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক থেকে প্রার্থীদের সহনশীল হতে নির্দেশনা দেয়া হবে। সহিংসতার ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আরো সক্রিয় হওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনাররা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে আমরা কথা বলবো। জানবো কেন-সহিংসতা হচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয়-সেই নির্দেশনা দেয়া হবে। বৈঠক থেকে প্রাণহানির ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

এবারের ভোটে প্রভাব বিস্তারের ঘটনাও লক্ষনীয়। ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয়ধাপে ১২১১ ইউপির মধ্যে ১৫৪টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমধাপে ৭৩জন এবং দ্বিতীয়ধাপে ৮১জন নির্বাচিত হন। এছাড়াও দু’ধাপে ইউপিগুলোর মধ্যে সাধারণ সদস্য পদে ২৭১জন এবং সংরক্ষিত নারী সাধারণ সদস্য পদে ৮৮ জনগনের প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তিনটি পদে এখন পর্যন্ত ৫১৩জন নির্বাচিত। দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করেছে। দলীয়ভাবে এখনো পর্যন্ত ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশ নিয়েছে।

এর আগে গত ২০জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দু’দফায় প্রথমধাপে ৩৬৫টি ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৮৪৬টি ইউপিতে ভোট হবে আগামী ১১ নভেম্বর। এছাড়াও তৃতীয় ধাপের ১০০৭ ইউপিতে ভোট হবে ২৮ নভেম্বর।