রোহিঙ্গাকে বিয়ে করাই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল

চট্টগ্রাম •

আমি বাংলাদেশি নাগরিক। বাড়ি রাঙ্গুনিয়া। রোহিঙ্গাকে বিয়ে করে ভুল করেছি। সব সময় নির্যাতন চালানো হতো। শেষে উপায় না পেয়ে বাবার বাড়ি চলে আসি। ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় চালের কার্ডের কথা বলে আমার ছবি তোলা হয়েছিল। সেখানে আমার নাম সালমা খাতুন ও ঠিকানা মিয়ানমার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে সেটি ধরা পড়বে জানতাম না। আমি এ প্রতারণার বিচার চাই।

দীর্ঘ ২৬ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে এসব কথা বলেন রোহিঙ্গা যুবকের প্রতারণায় জেলে যাওয়া সিরাজ খাতুন। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন তিনি।

আদালত ও মামলার সূত্রে জানা গেছে, সিরাজ খাতুন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পূর্ব খুরুশিয়া এলাকার নুর ইসলামের মেয়ে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ যাবতীয় কাগজপত্র। এক দশক আগে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা যুবক সিদ্দিক আহমদের প্রেমে পড়েন সিরাজ। এরপর পালিয়ে বিয়ে করে তার সঙ্গে থাকেন।

একপর্যায়ে ২০১৮ সালে সিদ্দিক-সিরাজ দম্পতিকে আটক করে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠায় পুলিশ। এরপর ভাতা পাওয়ার লোভে সিরাজকে ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে ক্যাম্পে নিবন্ধন করেন স্বামী সিদ্দিক। সেখানে সিরাজ খাতুনের নাম হয়ে যায় সালমা খাতুন। বাবার নাম উল্লেখ করা হয় মোহাম্মদ ইসহাক। দেওয়া হয় মিয়ানমারের ঠিকানা।

এরই মধ্যে সিরাজের ওপর শুরু হয় স্বামী সিদ্দিকের নির্যাতন। সন্তানদেরও নির্যাতন করতেন সিদ্দিক। সেই নির্যাতনে তাদের তিন সন্তানের একজন মারা যায়। এরপর উপায় না দেখে সন্তানদের নিয়ে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাবার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায় চলে যান সিরাজ।

বাড়ি ফেরার পর সম্প্রতি স্বজনদের পরামর্শে ওমান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন সিরাজ। ফলে গত ৩ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসে পাসপোর্ট করাতে যান তিনি। আর সেখানেই বাধে বিপত্তি। তার আঙুলের ছাপ যাচাই করে দেখা যায়- ২০১৮ সালে ‘সালমা খাতুন’ নামে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবন্ধিত হন তিনি। এরপর ৯ মাসের শিশুসহ তাকে ডবলমুরিং থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় পাসপোর্ট অফিস। পরদিন সংশ্লিষ্ট মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।

এদিকে, সিরাজ খাতুনের বিষয়টি জেনে তার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নামেন চট্টগ্রামের মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান। গত ১৬ জুন আদালতে সিরাজ খাতুনের পক্ষে জামিন আবেদন শুনানি করেন তিনি। শুনানিতে সিরাজ খাতুনের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণপত্র উপস্থাপন করা হয়। এরপর স্থানীয় এমপির জিম্মায় তাকে জামিন দেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালত।

ওই সময় জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলায় এমপি ড. হাছান মাহমুদের সাক্ষাৎ পেতে দেরি হয়। ফলে অন্য কারো জিম্মায় জামিন পেতে আদালতে আরেকটি আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ জুন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে সেই আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে তাকে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের জিম্মায় জামিনের আদেশ দেন বিচারক। এরপর তার জিন্মায় সিরাজ খাতুন কারামুক্ত হন।

এ বিষয়ে আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, বাঙালি হয়েও রোহিঙ্গার প্রতারণার কবলে পড়েছিলেন সিরাজ খাতুন। বিষয়টি জানতে পেরে আমি তার পক্ষে কাজ শুরু করি। নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে তিনি কারামুক্ত হয়েছেন। তার মামলাটি খালাসের জন্য আবেদন করব। এছাড়া যাদের কারণে তিনি প্রতারিত ও কারাভোগ করেছেন তাদের শাস্তির পাশাপাশি আদালতে ক্ষতিপূরণের আবেদন করব।