রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন আবদার

► দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন, অবাধ চলাফেরা, ফোন ও ইন্টারনেট সেবা দাবি
► সরব অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং এইচআরডাব্লিউ

ডেস্ক রিপোর্ট – নতুন রোহিঙ্গা ঢল আসার দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সংকট সমাধানের লক্ষ্যে তেমন কিছুই করতে পারেনি বিশ্বসম্প্রদায়। জাতিসংঘ এবং প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের এখনো রাখাইনে যেতে দেয় না মিয়ানমার সরকার।

এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ঝুলে গেছে। অন্যদিকে এ দেশেই রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন নতুন আবদার জানাচ্ছে মানবিক সহায়তা দেওয়া বিভিন্ন সংস্থা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, দুই দফা প্রত্যাবাসন শুরু করার উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়া এবং ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বেশ কিছু সতর্কতামূলক উদ্যোগ নিয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করা। তবে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবার ওপর কড়াকড়ি আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে দৃশ্যত অসন্তুষ্ট মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও)।

ওই সংস্থাগুলো মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা দেওয়াই শুধু নয়, উন্নত অবকাঠামো নির্মাণ এবং অবাধ চলাফেরার সুযোগসহ এ দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পানি ও স্যানিটেশন সেবা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। রোহিঙ্গারা অস্থায়ী শিবিরে থাকলেও তাদের পানি ও স্যানিটেশনের অধিকার পূরণ করতে বাংলাদেশ সরকার বাধ্য।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তুলে তাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

একই সঙ্গে সংস্থাটি রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সাড়াদান কর্মসূচির বাইরে গিয়ে ‘শরণার্থী’ হিসেবে সুরক্ষা ও মানবাধিকার সমুন্নত রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ‘শরণার্থী’ হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও শরণার্থী হিসেবে

প্রাপ্য অনেক সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে, জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা ভাবছে না বাংলাদেশ। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের চাপ কিছুটা কমাতে বাংলাদেশ এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার আপত্তিতে তা এখনো সম্ভব হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই মূল লক্ষ্য।

এদিকে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার দাবিসহ সাম্প্রতিক সময়ে চারজন রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে বর্ধিত নজরদারি, শিবিরের বাইরে চলাফেরায় কড়াকড়ি এবং রোহিঙ্গা সমাবেশ আয়োজনে সহায়তা দেওয়া এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছে এইচআরডাব্লিউ।

সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের টেলিফোন যোগাযোগ ও চলাফেরার ওপর কড়াকড়িতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

নিউ ইয়র্কে এ মাসেই হতে পারে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক : জানা গেছে, এ মাসের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক হতে পারে। গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার সময় কক্সবাজারে চীন দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখার কূটনীতিকও উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা সংকট কিভাবে সমাধান হবে তা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে এশীয় দেশগুলোর অবস্থানগত বড় পার্থক্য আছে। পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলো চায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরার আগে সেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। অন্যদিকে এশীয় দেশগুলো মনে করে, ফিরে যাওয়াটাই মূল অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

এশীয় অঞ্চলের প্রভাবশালী একটি দেশের এক কূটনীতিক গত বৃহস্পতিবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিপদে পড়ে এ দেশে আসা রোহিঙ্গাদের অতিথি হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এখন ‘অতিথিরা’ দাবি করতে পারে না যে দাবি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা যাবে না।

ওই কূটনীতিক বলেন, মিয়ানমারের কাছে রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না।

ঢাকার সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, চীন বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি তুললে মিয়ানমার রাজি হবে না।