রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে

তোফাইল আহমদ,কক্সবাজার:

কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে প্রতিদিন বেরিয়ে যাচ্ছে শত শত রোহিঙ্গা। কাজের সন্ধানে তারা ছুটছে দেশের নানা স্থানে।

অথচ তাদের শিবিরে ফিরে আসার খবর তেমন মিলছে না। তাদের এই কাজে সহায়তা করতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দালালচক্র। সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের রামু থানার পুলিশ শিবির থেকে পালানো এ রকম ১২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে শিবিরে ফেরত পাঠিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে নানা কৌশলে রোহিঙ্গাদের কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ার ধুম পড়েছে। দেশের নানা প্রান্তে এখন কাজের মৌসুম। বিশেষত ফসল কাটার এই সময়ে স্থানীয় লোকজনকে মজুর হিসেবে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা দৈনিক ৫০০ টাকার কম মজুরিতে কাজ করতে রাজি হয় না। অন্যদিকে রোহিঙ্গারা তিন বেলা খাবার আর দৈনিক ৩০০-৩৫০ টাকা মজুরিতে কাজের জন্য প্রস্তুত। এ কারণে তাদের কদর বেড়ে গেছে।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখা পালং জোনাবআলী পাড়ার বাসিন্দা সাঈদ হোসাইন বলেন, ‘এখন রোহিঙ্গাদের কদর আকাশছোঁয়া। আমি চার কানি জমির পাকা ধান কাটার জন্য পাঁচজন রোহিঙ্গা এনেছি দৈনিক ৫০০ টাকা করে। তাদের আবার দৈনিক তিন বেলা খাবারও দিতে হয়। অবশ্য দালাল ছাড়া হলে রোহিঙ্গাদের দৈনিক ৩০০-৩৫০ টাকা মজুরি দিলেই চলে। ’

সারা দেশের সঙ্গে বৃহত্তর চট্টগ্রামের গ্রাম-গঞ্জেও এখন ধান কাটার ভরা মৌসুম। এর বাইরেও নানা ক্ষেতখামারে মজুরের প্রয়োজন। ওদিকে স্থানীয় লোকজন নানা ক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় দিনমজুরিতে তাদের আগ্রহ কম। আবার আগ্রহ থাকলেও তাদের চাহিদা বেশি। ইটভাটাসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানায়ও একই চিত্র। ফলে স্থানীয় লোকজনের চেয়ে রোহিঙ্গা শ্রমিকের চাহিদা বেশি হয়ে পড়েছে। এমন সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।

শিবির থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মজুর হিসেবে কাজে লাগাতে দালাল জুটে গেছে স্থানে স্থানে। বিশেষ করে অনেক আগে আসা রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়  লোকজন রোহিঙ্গাদের দালালি করছে। রোহিঙ্গাদের শিবির থেকে বের করে দিতেও কাজ করছে দালাল। শিবির থেকে বের করার পর পুলিশ চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে যানবাহনে তুলে দিতেও দালাল রয়েছে। সেই যানবাহনে নির্দিষ্ট স্থানে এনে দিয়ে রোহিঙ্গাদের তুলে দেওয়া হচ্ছে অন্য দালালের হাতে। এরপর সেই দালাল রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু বাইপাস মোড়ে নিয়ে তুলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম অভিমুখী যানবাহনে।

সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের রামু বাইপাস মোড়ে খালেকুজ্জামান চত্বরে (ফুটবল চত্বর) চট্টগ্রামমুখী যানবাহনে তুলে দেওয়ার সময় থানার পুলিশ আটক করে ১২ জন রোহিঙ্গাকে।

রামু উপজেলা সদরের যুবকর্মী শওকত ইসলাম জানান, তাঁরা কয়েকজন বৈকালিক ভ্রমণে রামু বাইপাস মোড়ে গিয়ে দেখতে পান, সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও মহেন্দ্রসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে শিবির থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা এসে সেখানে জমায়েত হচ্ছে। দালালরা তাদের গাড়ি থেকে নামাচ্ছে আর অন্য গাড়িতে তুলে দিচ্ছে। তিনি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সহজভাবেই জানিয়েছে, উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং শিবির থেকে প্রতিদিনই এভাবে শত শত রোহিঙ্গা বেরিয়ে যাচ্ছে কাজের সন্ধানে।

রামুতে পুলিশের হাতে ধরা পড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে মোহাম্মদ নুর (২২) নামের একজন বলেন, ‘আমি বালুখালী ২ নম্বর শিবিরের এ-৪ ব্লকের বাসিন্দা। প্রতিদিনই শিবির থেকে আমাদের ভাইয়েরা (রোহিঙ্গা) বেরিয়ে যায় কাজের সন্ধানে। আমরা আজ সকালে বেরিয়ে পড়ি। দালালের সহায়তায় রামু পর্যন্ত আসি। এখান থেকে চট্টগ্রামের গাড়িতে সাতকানিয়া যেতে চেয়েছিলাম। ’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন সোমবার রাতে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে শিবিরের বাইরে যেতে না পারে সে জন্য পুলিশের ১৩টি চেকপোস্ট রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি জেলা পুলিশের এবং দুটি হাইওয়ে পুলিশের। এর পরও শিবির থেকে নানা কৌশলে এবং চোরাপথে রোহিঙ্গারা বেরিয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই শিবির থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা। এবার থেকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’