রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের সন্তানসম্ভবা প্রায় ২০ হাজার নারী : জন বিস্ফোরণের আশঙ্কা

জ্যোৎস্না ইয়াসমিন, কক্সবাজার :

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পগুলোতে বেড়েই চলেছে অনিয়ন্ত্রিত শিশু জন্মদান। রোহিঙ্গাদের উচ্চ জন্মহারের কারণে গত বিশ মাসে জন্ম নিয়েছে প্রায় লক্ষাধিক শিশু। এ ছাড়াও বর্তমানে শরনার্থী শিবিরে সন্তানসম্ভবা রয়েছে আরও অন্তত ২০ হাজার নারী। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীরা।তাদের মতে যে হারে রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। যে কোনোভাবে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে অচিরেই প্রাকৃতিক বৈচিত্রের জেলা কক্সবাজারে জনবিস্ফোরণ ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ইউনিসেফ কর্মীরা জানান, শরণার্থীদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনো বালাই নেই। ফলে ক্রমশ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের জন্মহার। পাশাপাশি রয়েছে বাল্যবিবাহের চলন।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে রয়েছি। রাতে ঘুম হয় না ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। পাহাড়-পর্বত ফসলি জমি সব রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। দিনের পর দিন তাদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি তাদের অপরাধের মাত্রাও বাড়ছে।’

এদিকে টেকনাফ ২১ নম্বর ক্যাম্পে কর্মরত ডা. আয়েশা কবির বলেন, ‘রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে গর্ভধারণের প্রবণতা অনেক বেশি। আমার দেখা ২০ বছরের একজন রোহিঙ্গা নারীর তিনটি করে সন্তান আছে। কিছু ধর্মীয় কথাবার্তাকে পুঁজি করে তারা আরও বেশি সন্তান জন্ম দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। পরিবার-পরিকল্পনার কথা বললেও তারা রাজি হয় না। বরং ডাক্তার, নার্সদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। সব মিলিয়ে আরও জটিল হয়ে উঠছে শরণার্থী সমস্যা।’

তিনি জানান, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসার কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। এজন্য কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই শতাধিক কর্মী রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সচেতনতা সৃষ্টি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অবহিত করছে।

কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসতে সরকার তিনটি পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। সেগুলো হলো তিন মাস মেয়াদী ইনজেকশন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি ও কনডম। এজন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদানে সাতটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। ২০০ জন কর্মী বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অবহিত করছে।

কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসে, তখন প্রথম তিন মাসে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৪৮০ জন গর্ভবতী নারীর। তার মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয় সাড়ে ৫ হাজার শিশু আর বাকিগুলো হোম ডেলিভারি হয়। ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে পরবর্তী ১২-১৫ মাস রোহিঙ্গা নারীদের গর্ভধারণ হার আগের মতোই ছিল। সে হিসেবে রোহিঙ্গা নবজাতকের সংখ্যা ৭০ হাজারের কম নয়। গত কয়েক মাস আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করার পর অনেক সচেতন হয়েছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। আমরা এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার নারীকে ইনজেকশন দিয়েছি, ৬৫ হাজার নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ দিয়েছি। এছাড়া তিন বছর মেয়াদী ও ১০ বছর মেয়াদী ইনজেকশন দিয়েছি আরো প্রায় ৬ হাজার জনকে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সদ্য সন্তান প্রসব করবে এমন নারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা না গেলে তা বাংলাদেশের জন্য নতুন ভয়াবহ সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছেন এই চিকিৎসক।

আমাদের নিউজটি ভালো লাগলে লাইক বাটনে ক্লিক করে লাইক দিন।