রোহিঙ্গা সঙ্কট: মিয়ানমারে ‘অকার্যকর’ কর্মকাণ্ডের তদন্ত করছে জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক – মিয়ানমারে গত এক দশকে নিজেদের তৎপরতা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘ। অভিযোগ উঠেছে যে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কথিত গণহত্যার আগে কিছু লক্ষণ দেখা গেলেও সেগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

জাতিসংঘ সূত্র দ্য গার্ডিয়ানকে নিশ্চিত করেছে যে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরেস প্রাথমিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। পরে সংস্থার ভেতরে চাপ সৃষ্টি হলে তিনি তদন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

তদন্তের নেতৃত্ব দিবেন গার্ট রোজেনথাল। গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি তিনি। এ ব্যাপারে যে সব বৈঠক হচ্ছে, সেগুলোর দেখাশোনাও তিনি শুরু করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তানিস্লাভ সালিং বলেছেন, “কোন ব্যক্তি বা সংস্থার কথা চিন্তা করে এই তদন্ত হচ্ছে না। বরং কিভাবে জাতিসংঘ একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাস্তব ক্ষেত্রে কাজ করে এবং সেখান থেকে ভবিষ্যতের জন্য কি শিক্ষণীয় রয়েছে, সেটা নির্ধারণের জন্যেই এই তদন্ত হচ্ছে”। এই তদন্তের জন্য রোজেনথাল সশরীরে মিয়ানমারে যাবেন না বলেও জানান তিনি।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রোজেনথালকে এ ক্ষেত্রে বাছাই করা হয়েছে কারণ “জাতিসংঘের কাজের ধরন সম্পর্কে তাকে খুবই সিরিয়াস এবং বিশেষজ্ঞ মনে করা হয়। তিনি জাতিসংঘকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জানেন এবং তিনি তার মনের কথাটা বলবেন বলে মনে করা হয়”।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডের পূর্ণ তদন্তের একাধিক দাবি উত্থাপিত হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধন অভিযান শুরুরও বেশ কয়েক মাস আগে একটি মেমো প্রকাশ করা হয়, যেখানে মিয়ানমারে জাতিসংঘের তৎপরতাকে ‘চোখে পড়ার মতো অকার্যকর’ হিসেবে মন্তব্য করা হয়।

রাখাইনে সঙ্ঘটিত সহিংসতাকে জাতিসংঘ জাতিগত নির্মূল অভিযান এবং সম্ভাব্য গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে, বহু গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সাত লক্ষাধিক মানুষকে সীমান্ত পারি দিয়ে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনের চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসমান গত বছরের শেষের দিকে বলেছেন, রাখাইনে একটা গণহত্যা এখনও চলমান রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেছেন: “এটা ভালো যে জাতিসংঘ মিয়ানমারে তাদের কর্মকাণ্ড কিভাবে চলেছে, সেটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে চাচ্ছে”।

“সুস্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে যে বিষয়টি ২০১৭ সালের আগস্টের বহু আগে থেকেই আমাদের কাছে এবং আরও অনেকের কাছে খুবই পরিস্কার ছিল, সেটা জাতিসংঘ দেখতে পায়নি এবং সে ব্যাপারে কোন সতর্কতাও জানাতে পারেনি। সেটা হলো বার্মিজ সামরিক বাহিনী একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল যাতে একটি বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করে দেয়া যায়”।

জাতিসংঘের তৎপরতার বিরুদ্ধে যে সব সমালোচনা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো মিয়ানমারে নিযুক্ত সাবেক রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর রেনেটা লোক-ডেসালিয়নের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অবিচারকে তিনি খাটো করে দেখেছেন’ এনএলডি সরকার এবং তার প্রধান অং সান সু চি’র বিরুদ্ধে যায় – এ ধরনের বিবৃতি দিতে অনুৎসাহিত করেছেন; মানবাধিকার জলাঞ্জলি দিয়ে উন্নয়ন কৌশলকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন; এবং যে সব রিপোর্ট তার পছন্দ হয়নি, সেগুলো ধামাচাপা দিয়েছেন তিনি। এ সব অভিযোগের অধিকাংশই অস্বীকার করেছে জাতিসংঘ।

তবে, জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক বলেছেন যে লোক-ডেসালিয়েনের উপর অভিযোগের বোঝা আরোপ করাটা ভুল হবে। এবং মিয়ানমারে ব্যর্থতার কারণ আরও বড় যেটার কারণ লুকিয়ে আছে জাতিসংঘের সিস্টেম এবং মিয়ানমারের কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার মধ্যে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ লোক-ডেসালিয়েনকে ‘মানবাধিকারের বিরামহীন প্রচারক’ হিসেবে মন্তব্য করে।