জমে উঠেছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা: শিশুদের বিনোদনে গলাকাটা বানিজ্য

সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জার্নাল ◑
প্রথম দিকেই জমে উঠেছে কক্সবাজারে শিল্প ও বানিজ্য মেলা। এবারে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা হয়েছে ব্যতিক্রমী ও জাঁকজমকপূর্ণ। প্রতিবারের মতো এবারও মেলা থাকছেন বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। মেলায় প্যাভিলিয়ন, স্টল, শিশুদের বিনোদনমূলক রাইডস, খাবার দোকান। এই বাণিজ্য মেলা আগত পর্যটকদের বিনোদনের বাড়তি খোরাক।

কিন্তু শিশুদের বিনোদনের নামে লাগামহীন বানিজ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। মাত্র ৩/৪ মিনিট বিনোদনের জন্য ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এতে সাধারণ মানুষ ইচ্ছা থাকার স্বত্বেও বাচ্চাদের আবদার রাখতে না পারায় খুবই মর্মাহত। এমনকি ওই বিনোদনের পাশা দিয়ে হেঁটে গেলেও অনেক শিশুদের কান্না দেখতে হচ্ছে। তাই বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিশুদের বিনোদনের দাম কমিয়ে রাখার আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

আয়োজকরা জানান, এবারের মেলায় কিছু ক্ষেত্রে বেশ ভিন্নতা এসেছে। শিশুদের জন্য মেলায় বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আনা হয়েছে উন্নতমানের ব্যতিক্রমী হরেক রকমের রাইডস। এছাড়াও রাইডস জগতে সম্পূর্ণ নতুন ছোট-বড় সকলের বিনোদনের জন্য আনা হয়েছে হানিসিন রাইডস। মেলায় এবার কক্সবাজার, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের উৎপাদিত পণ্যের সমাহার ঘটছে।

কালুর দোকান এলাকার মো. জসিম উদ্দীন নামের এক রিক্সা চালক বলেন, আমার সন্তান আছে ৪ জন। বড় ছেলের বয়স ১০ বৎসর। বলতে গেলে সবাই ১০ বছরের নিচে। রিক্সা চালিয়ে বাসায় ঢুকার সাথে সাথে বলে বাণিজ্য মেলায় কখন নিয়ে যাবেন বাবা। তখন আমার মনটা খুব ছোট হয়ে যায়। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে পাই ৫ থেকে ৬ টাকা। এই টাকা নিয়ে চাউল কিনবো নাকি বাজার কিনবো চিন্তার মধ্যে থাকি। তারপরেও প্রতিদিনের আয়ের টাকা থেকে ১০০ করে জমায়েত করে সপ্তাহব্যাপী ৭০০ টাকা দিয়ে স্ত্রীসহ সবাইকে নিয়ে বাণিজ্য মেলায় যাই। ঢুকতে টিকেট এর মূল্য আসে ১২০ টাকা। বাকী টাকা নিয়ে বাণিজ্য মেলায় ঢুকছি। ভিতরের ঢুকার সাথে সাথে ছোট্ট ছেলে দুইটি বলে বাবা আমি নৌকায় চড়বো। বাবা ওখানে দাম বেশি আমার ততো টাকা বললেই ছেলে দুইটি কান্না শুরু করে দিল। শেষ পর্যন্ত কিছু খেলনা জাতীয় জিনিস কিনে দিয়ে বাসায় ফিরছি। ওই নৌকাতে চড়তে না পেরে সারা পথে কান্না করেছিলো। আমার মনেও খুব কষ্ট পেয়েছি। দাম যদি কম থাকতো হয়তো আমার সন্তানদের ওই নৌকাতে চড়াতে পারতাম।

খুরুশকুল এলাকার স্কুল শিক্ষক নাছির উদ্দীন পরিবার নিয়ে এসেছেন কক্সবাজার বানিজ্য মেলায় তিনি জানান, বানিজ্য মেলাতে শিশুদের জন্য কিছু বিনোদন মূলক খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে। তবে সেখানে অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে। আমার ২ ছেলে মেয়ে বায়না অনুসারে ওয়াটার স্ক্রীতে গিয়ে দেখা গেছে মাত্র ৩ মিনিট বিনোদনের জন্য ১০০ টাকা দাম রাখা হচ্ছে। এছাড়া ওয়াটার বলও সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের জন্য দাম রাখা হচ্ছে ১০০টাকা। এছাড়া নাগর দৌলা,নৌকা চড়া এবং দোলনা এবং পাম্প সিড়ি সহ সব খেত্রে বাস্তবতার চেয়ে ৩ গুণ দাম রাখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আমার সামনে অনেক গ্রাম থেকে আসা মানুষ টাকার অভাবে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও ছেলে মেয়েদের এসব বিনোদন দিতে পারছেনা।

পিএমখালী ইউপি সদস্য নুরুল হুদা বলেন, আমি বানিজ্য মেলায় গিয়ে ছেলে মেয়েদের ইচ্ছার কারনে বেশ কিছু খেলনাতে বাচ্চাদের অংশ গ্রহন করতে হয়েছে। তবে সেখানকার দাম একেবাবে গায়ে লাগার মত। প্রতিটি খেলনা মাত্র ৪/৫ মিনিটের জন্য, তবে দাম রাখছে ৫০/১০০ টাকা। আমার চোখের সামনে গ্রাম থেকে আসা অনেক গরীব মানুষকে দেখেছি টাকার কারনে শিশুদের বিনোদন দিতে পারছেনা। আমার মতে প্রত্যেকটা কিছুর একটি বাস্তব সম্মত দাম থাকা দরকার। বানিজ্য মেলায় শিশুদের বিনোদন মূলত প্রতিটি কিছুর দাম অনেক বেশি এটা কমানো দরকার।

শিশুদের বিনোদনের টিকিট বিক্রি করা রফিক, শামসু সহ অনেকে বলেন,দাম নির্ধারনে আমাদের কোন হাত নেই এগুলো সব ঢাকা থেকে আনা হয়েছে। মালিক যেভাবে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেভাবেই আমরা বিক্রি করছি। তবে মেলা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেই দাম ঠিক করা হয়েছে। আর মেলা কর্তৃপক্ষ চাইলে দাম কমাতে বাধ্য হবে সবাই।