শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের হানা

ওমর ফারুক হিরু :

রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে যুক্ত হচ্ছে শ্রমের কাজে। তারা কাজের দাম কমানো সহ নানা বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে স্থানীয় শ্রমজীবিরা। ফলে হুমকি’র মুখে পড়ছে শ্রমবাজার।

জানা যায়, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু রেশন প্রদানের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। তারা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এবং এর আশপাশের বাজারে দোকানসহ ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। বিভিন্ন এনজিও ক্যাম্পে দিনমজুর শ্রেণীর কার্যক্রমে টাকার বিনিময়ে তাদের কাজে লাগাচ্ছে। এমনকি অনেকে চাকরিও করছেন।

এত সুবিধার পরেও বাড়তি টাকার জন্য রোহিঙ্গারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চেকপোস্ট ক্রস করে ক্যাম্প থেকে শহরে প্রবেশ করছে কাজের সন্ধানে। তারা শ্রমের দাম কমানো সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছেন। তাদের কারণে শ্রমবাজার অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বলে জানান স্থানীয় শ্রমিকরা।

শহরের ঘুমগাছ তলার শ্রমবাজারের দিনমজুর আব্দুল কাদের জানান, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা অতিষ্ঠ। তারা খুব ভোরে অথবা আগের দিন রাতে ক্যাম্প থেকে চলে আসে এবং শ্রমবাজারে যুক্ত হয়। তারা ৮’শ বা ১ হাজার টাকার কাজ ৪’শ টাকা দিয়ে পর্যন্ত করে। এতে তাদের কোন সমস্যা হয়না। কারণ তারা ক্যাম্পে সব পাচ্ছে। এইটা তাদের কাছে বাড়তি লাভ। এতে আমরা’ই সবচেয়ে কষ্টে পড়ি। এর ফলে একদিকে কাজের রেইট কমে যায় অন্যদিকে কাজ পাওয়া যায়না।’

বদিউল আলম নামে আরেক দিনমজুর জানান, ‘শুরুর দিকে রোহিঙ্গারা শ্রম বাজারে কম আসলেও এখন অনেকটা নিয়মিত আসে। তারা এখন অনেক বেশি মারমুখি হয়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে সংঘবদ্ধ হয়ে ঝগড়া করে।

গতকাল (মঙ্গলবার) ঘুমগাছ তলার শ্রমবাজারে স্থানীয় শ্রমিকদের সাথে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শ্রমিককেও দেখা যায়। তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান নামে এক রোহিঙ্গা জানান, ‘তিনি কুতুপালং ক্যাম্প থেকে এসেছেন। ওখানে যে রেশন পান তা দিয়ে ১২ সদস্যের সংসার ঠিকমত চলেনা। তাই কাজের জন্য শহরে চলে এসেছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরেই এই শ্রমবাজারে আসছে।’

শহরের সমিতি পাড়ার শুটকি পল্লীতে কাজ করা রোহিঙ্গা নারী রাবেয়া বেগম জানান, ‘১ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। ৫ সন্তান নিয়ে ক্যাম্পে চলতে কষ্ট হচ্ছে। রেশনে যে সহযোগিতা পায় তা দিয়ে চলছেনা। তাই পুরাতন এক রোহিঙ্গা আত্মীয়ের সহযোগিতায় শুটকি পল্লীতে চলে এসেছেন। তিনি এখানে দৈনিক ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা আয় করেন।

এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্য পরিষদের সভাপতি ছৈয়দ আলম জানান, এই মুহুর্তে রোহিঙ্গারা আমাদের কাছে আতংক। তারা শ্রমবাজারে প্রবেশ করে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে পুণরায় ক্যাম্পে ফিরে যাচ্ছে। তাদের অপকর্মের দায়ভার নিতে হচ্ছে আমাদের। প্রশাসন কঠোর হলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে অবৈধভাবে শহরে আসতে পারেনা। এছাড়া স্থানীয় কিছু মানুষ আছে যাদের কারণে রোহিঙ্গারা প্রশ্রয় পায়। তারা কম টাকায় রোহিঙ্গাদের কাজে লাগিয়ে ঝুঁকি তৈরী করে।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, এই সমস্যা সমাধানের উপায় হচ্ছে একজন রোহিঙ্গাও যেন ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারে। শহরে যেসব রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গাদের পুণরায় ফেরৎ পাঠানোর প্রক্রিয়াটি কোনভাবেই সঠিক নয়। তাদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা বা জেল-জরিমানা দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। এছাড়া যেসব স্থানীয় লোকজন রোহিঙ্গাদের ঘরভাড়া দেয়, গৃহ পরিচারিকা হিসেবে রাখে, শ্রমের কাজে ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা বাড়াতে হবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের কাছে খবর রয়েছে। তাদের অনেকে নানা কৌশলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প থেকে শহরে আসার চেষ্টা করে। প্রশাসনও অভিযান অব্যাহত রখেছে। যখনই খবর পাচ্ছে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরে পুণরায় ক্যাম্পে ফেরৎ পাঠাচ্ছে।