শ্রীহীন হচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট

তোফায়েল আহমেদ, কালেরকন্ঠ •

দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে ভাঙন ধরেছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট নামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানটির বালুচর ক্রমশ সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সেই সঙ্গে বালিয়াড়ি সরে পড়ায় সৈকত হয়ে পড়েছে শ্রীহীন। অপরদিকে সরে পড়া বালিয়াড়িতে পাকা দেওয়াল ও পিলারের কারণে সৈকতে চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমনি দেখা গেছে, এবারের বর্ষায় আকস্মিক সাগর পাড়ের মূল আকর্ষণীয় স্থান লাবণী পয়েন্টের বালুচর ক্রমশ সাগরে বিলীন হতে শুরু করে। সামুদ্রিক প্রতিটি জোয়ারের তোড়ে সৈকতের বালুচর বিলীন হতে থাকে। এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে ৮/১০ ফুট বালিয়াড়ি ইতিমধ্যে সরে গিয়ে সেখানে এখন সাগরের জোয়ার ভাটা স্থান নিয়েছে।

ইতিমধ্যে জোয়ারের তোড়ে হারিয়ে গেছে, ফি বছরে নানা উপলক্ষে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের বিস্তীর্ণ যে বালুচরটি ভেন্যু হিসাবে ব্যবহার করা হত সেটিও। অথচ বালুচরের এ ভেন্যুতেই লাখো দর্শকের কনসার্ট অনুষ্ঠানও হয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস সহ নানা দিবসে ভেন্যু হিসাবে ব্যবহারের জন্য নতুন করে বালুচর খুঁজতে হবে।

দীর্ঘ সময় ধরে কক্সবাজার সাগর পাড় মানেই লাবণী পয়েন্টের সৈকত হিসাবে পরিচিতি বহন করে আসছে।

এখানেই রয়েছে বিশাল উন্মুক্ত স্থায়ী মঞ্চ। আজ থেকে দেড় যুগ আগে সৈকতে জোয়ার-ভাটার সতর্কতামূলক সাইন বোর্ড দেয়ার জন্য পাকা পিলার স্থাপন করা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল ওয়াক ওয়ে’র পাকা দেয়ালও। এক সময় সাগরের চর ভরাট হতে হতে সেইসব স্থাপনাগুলো বালিতে ঢাকা পড়েছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বালু অস্বাভাবিকভাবে সাগরে সরে যাওয়ায় পাকা স্থাপনাগুলো আবার দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে। এসব পিলার এবং দেওয়াল সৈকতের বালুচরে চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। বিস্তীর্ণ চরের বালু সরে যাওয়ায় উঁচু নিচু হয়ে গেছে সৈকতটি। ভেঙ্গে পড়ছে সৈকতের বালিয়াড়ি। যার কারণে বালিয়াড়ির স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এতে সৈকতে বেড়ানোর সময় যে কোন কেউ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা রয়েছে বেশি ঝুঁকিতে।

বালুচর ভাঙনের কারণে লাবনী সৈকতে ভ্রমণের জায়গাও হয়ে গেছে সংকুচিত। পর্যটকরাও এলাকাটি এড়িয়ে চলার কারণে পর্যটক ছাতা বসার চেয়ারগুলোও সরানো হচ্ছে। সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত সৈকত কর্মী মাহবুব জানান, চলতি বর্ষার সময়েই সৈকতের লাবণী পয়েন্ট এলাকার বালু অস্বাভাবিক সরে যাওয়ায় এখন এলাকাটি পর্যটকের কাছে আকর্ষণ হারানোর পথে বসেছে।

রাজধানী ঢাকার বাসাবো থেকে সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি কিবরিয়া জামান জানান- ‘গত দুই বছর আগে সৈকতে বেড়াতে এসে এরকম ভাঙ্গা অবস্থা দেখিনি। আকস্মিক এরকম অবস্থা কেন যে হলো তা ভাবার দরকার রয়েছে। ’ সৈকতের ইয়াছির লাইফ গার্ডের কর্মী মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে লাইফ গার্ড হিসাবে এখানে কর্মরত।

লাইফ গার্ড মোস্তফা কামাল বলেন, তখন লাবণী পয়েন্টের সৈকতটি ছিল ঠিক এখনকার মতো। এটি ক্রমশ ভরাট হয়ে সাগর দূরে সরে পড়েছিল এতদিন। কিন্তু দুই দশক পর আবার ভাঙতে শুরু করেছে সৈকতের বালিয়াড়ি। তিনি জানান, দীর্ঘকাল সৈকতে কাজ করে অভিজ্ঞতায় বলে, সাগরের একদিকে ভাঙতো আরেকদিকে গড়ে।

এসব বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (পর্যটন ও প্রটোকল) এস এম সরওয়ার কামাল জানান- ‘সাগর পাড়ের লাবণী পয়েন্ট এলাকার বালুচর এবারের বর্ষায় বিলীন হয়ে স্থানটি সংকুচিত হয়ে গেছে। তদুপরি ওয়াকওয়ে’র দেয়াল থাকার কারণে সৈকত ভ্রমণও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ’

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সেকতের ভাঙন ঠেকাতে ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে শিগগিরই।