সবচেয়ে ঘৃণ্য কিছু সন্ত্রাসী হামলা (পর্ব ১)

ডেস্ক রিপোর্ট – নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা সাম্প্রতিককালের অন্যতম ঘৃণ্য ঘটনা। নিউজিল্যান্ডের মত শান্তিপূর্ণ দেশে এমন ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে পুরো বিশ্ববাসীকে। কিন্তু এমন ঘৃণ্য ঘটনা পৃথিবীতে এই প্রথম ঘটেনি। এমনকি নিউজিল্যান্ডেও এমন সন্ত্রাসী হামলা প্রথম নয়। ৩০ বছর আগেও নিউজিল্যান্ডে এমন সন্ত্রাসী হামলা সংগঠিত হয়েছিল। শুধু নিউজিল্যান্ড নয় বরং বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটেছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য সব হত্যাযজ্ঞ। কিছু কিছু হামলা আবার নিউজিল্যান্ডের হামলার থেকেও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। কারণ ভিন্ন ভিন্ন হলেও এসকল সন্ত্রাসী হামলাতে প্রাণ যায় প্রায় শত থেকে হাজার মানুষের। তো জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর সবথেকে ঘৃণ্য কিছু সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে-

নাইন ইলেভেন 
আল-কায়দা দ্বারা সংগঠিত নাইন ইলেভেন  মানব ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা। যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া এই সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ যায় ২ হাজার ৯ শত ৯৬ জন মানুষের এবং আহত হয় আরো প্রায় ৬ হাজার মানুষ। এছাড়াও প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি ধ্বংস হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। মানব ইতিহাসে এর থেকে বড় কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়নি। এই হামলাটি সংঘটিত হয়েছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। হামলার তারিখ অনুসারেই এর নামকরণ করা হয়। এদিনে সন্ত্রাসীরা ৪ টি প্যাসেঞ্জার বিমান ছিনতাই করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থাপনাতে হামলার পরকল্পনা করে। তার মধ্যে দু’টি সফল হয়। টুইন টাওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। এই স্থাপনাগুলোতে সন্ত্রাসীরা ছিনতাইকারী বিমানগুলো থেকে সরাসরি আঘাত করে। এই আঘাতে ১১০ তলা বিশিষ্ট টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয় এছাড়াও পেন্টাগনে ক্ষতি সাধিত হয়। হাইজ্যাক করা অপর একটি বিমান যা হোয়াইট হাউজে আক্রমনের পরিকল্পনায় ছিল তা মাঝ আকাশে ধ্বংস হয়।

ইয়াজিদি বোম্বিং 
২০০৭ সালের ১৪ আগস্ট ইরাকের ইয়াজিদি প্রদেশের খাতানিয়া এবং জারিরাতে ঘটে যায় মানব ইতিহাসের আরেকটি ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলা। এতে প্রাণ যায় আনুমানিক ৯০০ মানুষ এবং আহত হয় প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষ। এই হামলার জন্য চারজন আত্মঘাতী জঙ্গী ইয়াজিদির চারটি জনবহুল স্থানে চারটি বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায়। প্রতিটি বোমাই গাড়িতে ছিল এবং ফুয়েল ট্যাংক ছাড়াও জঙ্গীরা এসকল হামলায় কামানের গোলাকে, বিষ্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করে। এই হামলার দায়ভার কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী স্বীকার করেনি। তবে ধারণা করা হয়, ইয়াজিদি এবং ইরাকি সুন্নিদের মধ্যে চলমান দন্দ্বের কারণেই এই হামলা সংগঠিত হয়েছিল। তবে এই হামলার পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইরাকি সরকার বিভিন্ন সুন্নি মিলিশিয়া গ্রুপকে এর জন্য দায়ী করে।

বেসলান স্কুল ক্রাইসিস 
চেচেনরা রাশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। যার মধ্যকার কিছু ছিল অত্যন্ত ঘৃণ্য ঘটনা। যেগুলোর একটি বেসলন স্কুল হোস্টেজ ক্রাইসিস। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর চেচেন এবং ইংগুস জঙ্গীরা বেলসানে একটি স্কুলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ১১ শত সাধারণ মানুষকে। যার মধ্যে ৭ শত ৭৭ জনই ছিল স্কুলপড়ুয়া বাচ্চা। সন্ত্রাসীরা এসকল মানুষকে জিম্মি করে রাশিয়ান সরকারের কাছ থেকে চেচেনিয়ার রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে মুক্তি এবং চেচেনিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু রাশিয়ান সরকার এই দাবী পূরণে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। সন্ত্রাসীরা জিম্মি হত্যা শুরু করে। অপরদিকে রাশিয়ান সরকারও সন্তাসীদের সঙ্গে বৈঠক এবং বোঝাপড়া করার চেষ্টা চালাতে থাকে। চার দিনে অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে রাশিয়ান সরকার জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য স্পেশাল ফোর্স প্রেরণ করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলাফল মঙ্গলজনক ছিলনা। স্পেশাল ফোর্স এবং সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষে প্রাণ যায় প্রায় ৩৮৫ জন সাধারণ মানুষের। যার ভেতরে বেশিরভাগই বাচ্চা ছিল। এছাড়াও অনেক জিম্মিই এই হামলার পর থেকে নিখোঁজ।