সবজির বাজারে উত্তাপ, হতাশা কক্সবাজারের খুচরা বাজারে

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

এ সময়ে বর্ষাকালীন সবজি ওঠলেই বাজারে দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু বাজারের বর্তমান চিত্র ভিন্ন। স্বস্তিতে নেই নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। এবার অতি বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে এখন সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি কিছু কিছু সবজির দাম দেড় থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছের দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। বাজার দরের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পড়েছেন সংকটে। পণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতারা আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না।

ক্রেতারা বলছে, ঘাটতি দেখা দিলেই মুনাফালোভীরা জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করে। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে বলে সবজির মূল্যও বাড়ছে। ক্ষুব্ধ সাধারন মানুষের অভিযোগ, কোন নিয়ন্ত্রন কিংবা বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রতিদিনি পন্যের মূল্য বাড়াচ্ছে।

কলঘর বাজারে বাজার করতে আসা শহিদ উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশ যেন একটা মগের মুল্লুক। কেউ আগুনে পুড়ে মরে, কেউ না খেয়ে মরে। আবার কেউ মানুষকে জিম্মি করে টাকা-পয়সা বানানোর পাঁয়তারা চালায়। সাধারণ মানুষের সমস্যা দেখার যেন কেউ নাই। তিনি বলেন, দেশে হঠাৎ কি এমন হয়ে গেল সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে? দেশে তো বন্যা, খরা বা কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। অরাজক কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টিও হয়নি। তাহলে সবকিছুর দাম এতো কেন? বাজারে মাংসের যে দাম তাতে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে মাসে এক-দুবার মাংস খাওয়ার উপায়ও নেই। সবজি কিনে খাবো তারও উপায় নেই। বেশিরভাগ সবজির দাম প্রায় ১০০ টাকা। আর মাছ যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ছাড়া বাজার থেকে অন্য মাছ কেনার উপায় নেই।

মাছ, মাংস ও সবজির চড়া দামে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বড় বাজারে বাজার করতে আসা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে মাছ ও মাংসের দাম খুব বেশি। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে কারো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। জিনিসপত্রের দামের বিষয়ে দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্যও শুনছি না। যত দুর্ভোগ সব নিম্ন আয়ের মানুষের। তিনি আরোও বলেন, প্রতি বছর যেকোন সময় বিভিন্ন মহল হঠাৎ জিনিসের দাম বহুগুণে বাড়িয়ে ফেলে, সে বিষয়ে যেন কারোর কোনো ধারণা নেই। দু’তিনদিন বৃষ্টি হয়েছে। অথচ এখনই সব জিনিসের দাম বেড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

খুচরা সবজি বিক্রেতা মোঃ মুন্না জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। সবজি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এখনও তেমন হয় নি বললেই চলে। এলাকার সবজির জন্যে ঢাকার মোকামের ওপর নির্ভর করতে হয়। মোকাম থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হয়। আমরা কম লাভেই বিক্রি করে থাকি। তবে বুধবারের বৃষ্টিতে আরো দাম বাড়ার আশংকা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সদর উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতি কেজি করলা ৭০ টাকা, দুন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, টমেটো ১২৫ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, লাল শাক ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, গোল আলু ৩২ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বয়লার মুরগির কেজি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা। আর পাকিস্তানি কক মুরগি গত সপ্তাহের মতো ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে গরুর মাংসের কেজি পৌঁছে গেছে সাড়ে ৫০০ টাকায়। বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা কেজি।

এর মাধ্যমে গত এক মাসে প্রতি সপ্তাহেই গরুর মাংস দাম কিছু না কিছু বেড়েছে। মাংসের দামের পাশাপাশি স্বস্তি দিচ্ছে না ডিমের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম নতুন করে না বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে এক পিস ডিম ১০ টাকার নিচে মিলছে না। আর পাইকারিতে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি। তাছাড়া ইলিশের দাম যেন আকাশ ছোঁয়া।