সমুদ্র ছুঁয়ে যেভাবে তৈরি হচ্ছে রানওয়ে

সুজাউদ্দিন রুবেল •


দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে হতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরে। বর্তমানের নয় হাজার ফুটের দীর্ঘ রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে।

আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত করতে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ব্লক তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে রানওয়ে। এই নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে চীনের দুইটি প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট। এটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ ফুটে। সম্প্রসারিত হতে যাওয়া রানওয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুটই থাকবে সমুদ্রের ওপর।

প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিওটিউব, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম। এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে হতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তর বিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তর বিন্যাস। তারপর হবে পাথরে স্তর বিন্যাস এবং নিচ্ছিদ্রকরণ, পিচ ঢালাই ও নিচ্ছিদ্রকরণ। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে এবং প্রাথমিক সমুদ্র হতে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন।

সমুদ্র তলদেশের উপর ব্লক তৈরি করে এর উপর স্থাপনা নির্মাণ করা। দেশে এই প্রথম কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়। সমুদ্রের কিছু অংশ ভরাট করে সেখানে নির্মাণ করা হবে রানওয়ে। সমুদ্র ছুঁয়ে আকাশে উড়বে বিমান।

কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের প্রথম সবচেয়ে বড় রানওয়ে হতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের। এই রানওয়ে হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানও এখানে নামতে পারবে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৯ হাজার ফুট। যেটি বর্ধিত হয়ে হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে। যা বাংলাদেশে প্রথম সবচেয়ে বড় রানওয়ে। এখানে বড় বড় বোয়িং এবং বিশ্বে বড় বড় বিমানগুলোও এই রানওয়েতে নামতে পারবে। আশা করছি, আগামী বছরই কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যাত্রা শুরু করবে।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ একটি রানওয়ে রয়েছে। এটি ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেবিচক।

এদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তে যুক্ত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান, কক্সবাজারের সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হলে প্রাচ্য ও পাশ্চত্যে চলাচল করা বিমানবন্দরগুলোর রিফুয়েলিং পয়েন্ট রূপান্তির হবে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে কক্সবাজারকে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র বানাতে কক্সবাজারে বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন বা এলাকা তৈরি করে দেওয়া হবে।