সম্ভাবনা থাকলেও পর্যটন খাত বিকাশে নেই পরিকল্পনা

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
পর্যটনের অপার সম্ভাবনার জেলা গাজীপুর। নদ-নদী, খাল-বিল, সবুজ প্রকৃতি, নির্মল বায়ু আর প্রাচীন ঐতিহ্যের উর্বর ভূমি এ জেলায় পর্যটনকেন্দ্রিক বিভিন্ন রিসোর্ট ও পার্ক স্থাপিত হলেও পর্যটনের উপযোগী আরও নানা সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। পর্যটনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ থাকলেও সরকারি-বেসরকারি সঠিক পরিকল্পনা আর উদ্যোগের অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়ের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে শাল-গজারির যে বন রয়েছে তা হারিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র অমনোযোগিতার কারণে। খাস জমিগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও শিল্পকারখানার জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যাচ্ছেতাইভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে বড় বড় বিল্ডিং, স্থাপনা।

এতে অপার সম্ভাবনাময় গাজীপুর জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মৃত্যু ঘটছে। একটু পরিকল্পনা করে আগানো গেলে গাজীপুর হতে পারে মডেল একটি শহর ও পর্যটন এলাকা। এত ঘনবসতির শহর ঢাকার অদূরে বৃক্ষ সম্পদশালী গাজীপুরকে নিয়ে সরকারের ভাববার জায়গাটা প্রসারিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে অনেকগুলো পিকনিক স্পট, শুটিং স্পট, রিসোর্ট, পার্ক বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে। কিছু কিছু ভালোমানের হোটেলও গড়ে উঠেছে এখানে। এর সাথে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও আগের ঐতিহ্য ধরে রাখা নয়নাভিরাম জায়গা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান।

শুধুমাত্র যেকোনো জায়গায় অনুমতি ব্যতিরেকে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা এবং শিল্প কারখানার জন্য আলাদা জোন তৈরি করে গাজীপুরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত শহরে রূপদান করা সম্ভব। ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কের দু’প্রান্তে বিভিন্ন স্থাপনার সাথে সাথে আভিজাত্যপূর্ণ কিছু হোটেল নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। রাস্তার মাঝখানটা হবে সবুজ বৃক্ষের অসাধারণ বাগান এবং তা সুন্দর করে বেষ্টনি নির্মাণ করে দিতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য কিছু দূর পরপরই নির্মাণ করতে হবে নয়নাভিরাম সবুজ ওভার পাস। রাস্তার লাইটিং ব্যবস্থায় আনতে হবে নতুনত্ব। এর সাথে একটি বিশ্বমানের হোটেল, একটি স্টেডিয়াম এবং বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গাজীপুরের শ্রীপুরে নির্মাণ করা গেলে পর্যটনের একটি বড় খাত তৈরি হতে পারে খুব সহজেই। অনেক পর্যটক এসেই জিজ্ঞেস করে এখানে ভালো থাকার জায়গা ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে কিনা।

উঁচু হওয়ায় এখানে বন্যারও তেমন কোনো আশঙ্কা নেই এবং এ কারণে গাজীপুরের সমতল জায়গাগুলো যেকোনো ধরনের সুন্দর স্থাপনা নির্মাণের জন্য উপযোগী। ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়ের গাছপালা কাটা বন্ধ করতে হবে, খাস জমিগুলো উদ্ধার করে তাতে পুনরায় বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং এর সাথে খাল ও নদীগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

একদিকে কাপাসিয়া হয়ে বরমী পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে পর্যটন এরিয়া তৈরি করা অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ঘেঁষে একটি স্টেডিয়াম ও হাসপাতাল তৈরির প্রক্রিয়া চালু করা গেলে পর্যটনের স্বাদ বেড়ে যাবে আরও।

এছাড়াও গাজীপুরের সবচেয়ে বড় সম্পদ জাতীয় ফল কাঁঠালের বাগান ঘেরা মাটির ঘরগুলো হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দূষণমুক্ত ঘরের রোল মডেল। বর্তমানে শীতকালে প্রচুর পিকনিকের আয়োজন হয়ে থাকে গাজীপুরের বিভিন্ন পিকনিক স্পট ও রিসোর্টগুলোতে। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল নিতান্তই ফাঁকা। এই ফাঁকা সময়টাও কাজে লাগানো সম্ভব যদি কিছু পরিকল্পনা করা যায়। মানুষ সবুজে সতেজতা চায় আর এজন্যই বর্ষাকালীন এ সময়টাতে গাজীপুরে ঘুরতে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা যেতে পারে। ভাওয়াল রাজার অসাধারণ বাড়ি, জাতীয় উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সময়ের ঘটনাবলির স্মৃতিবিজড়িত গাজীপুরকে যদি পরিকল্পিত নগরায়নের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয় তবে ঢাকার উপর চাপ কমে যেতে পারে অনেকটুকু। ঢাকার উপর চাপ কমানো এবং গাজীপুরকে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারলে তা হতে পারে বিশ্বে পর্যটনের ক্ষেত্রে চমৎকার একটি উদাহরণ।

জেলার পর্যটন শিল্পকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করতে যেসব পরিকল্পনা দেওয়া দরকার সে দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
জাগোনিউজ২৪