সাঁতার না জানাই কাল হলো

ডেস্ক রিপোর্ট •

ওরা কেউ সাঁতার জানত না। তবু সাহস করে বাড়ির পাশের খালে নেমেছিল গোসল করতে। আর পাড়ে উঠতে পারেনি। স্রোতে ভেসে যায় দুই বোনসহ চার খেলার সঙ্গী। তাদের তিনজনের লাশ উদ্ধার করতে পারলেও দশ বছরের শিশু রিয়া নিখোঁজ রয়েছে।

সোমবার বিকেলে গাজীপুর সদর উপজেলার পাইনশাইল এলাকার লবণদাহ খালে মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া কিশোরীরা হলো- পাইনশাইল গ্রামের সোলাইমান হোসেনের মেয়ে রিচি আক্তার (১৫), মনজুর হোসেনের মেয়ে মায়া আক্তার (১৪) ও একই গ্রামের মৃত হায়েত আলীর মেয়ে আইরিন আক্তার (১৪)। এখনও নিখোঁজ আছে সোলাইমান হোসেনের ছোট মেয়ে রিয়া আক্তার।

আইরিন পাইনশাইল গ্রামের গাছপুকুরপাড়া দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও মায়া আক্তার জমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণিতে পড়ত। একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল মায়া। আর নিখোঁজ রিয়া স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ওই শিশু-কিশোরীর স্বজনদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে পানশাইল এলাকার বাতাস।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিচি ও তার ছোট বোন রিয়া তুরাগ নদের শাখা লবণদাহ খালে গোসল করতে নামে। একই সঙ্গে তাদের খেলার সাথী মায়া ও আইরিনও নামে ওই খালে। তাদের কারোই সাঁতার জানা ছিল না। এখনও বন্যার পানি থাকায় খালে ছিল তীব্র স্রোত। হঠাৎ করেই ওই চার শিশু স্রোতে ভেসে যায়। এই দৃশ্য দেখে আশপাশের লোকজন পানিতে নেমে রিচিকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মায়া আক্তার ও আইরিন আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে। তবে এখনও রিয়ার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি ডুবুরি দল।

সন্ধ্যার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে নিহত শিশু-কিশোরের স্বজনদের সমবেদনা জানান। রাত ৯টার দিকে তিন কিশোরীর জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়। নিখোঁজ রিয়ার উদ্ধার তৎপরতা স্থগিত করা হয় রাত ৮টার দিকে।

এলাকাবাসী জানায়, সোলাইমান হোসেনের দুটিই কন্যা। আর কোনো সন্তান নেই। দুই মেয়েই ছিল ইট ব্যবসায়ী সোলাইমানের সব। তাদের হারিয়ে সোলাইমান প্রায় পাগল। এলাকাবাসী আরও জানায়, স্কুল খোলার প্রথম দিনই দুই কন্যা তাদের বাবার হাত ধরে স্কুলে গিয়েছিল। বড় মেয়ে চিকিৎসক হবে এমন স্বপ্নই বুকে লালন করতেন সোলাইমান। বাবা হায়েত আলী প্রয়াত হয়েছেন আইরিন ছোট থাকতেই। মায়ের কাছে বড় হচ্ছিল মেয়েটি। আর মায়া আক্তারের বাবা মনজুর হোসেন রিকশা চালিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। তাকে নিয়েও এই রিকশাচালক বাবার স্বপ্ন ছিল আকাশসম।